পুরুলিয়ায় অবস্থিত নাককাটা কালীর মন্দির একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং রহস্যময় মন্দির। এই মন্দিরের কাহিনী এবং মায়ের মাহাত্ম্য লোকমুখে প্রচলিত রয়েছে বহুকাল ধরে। ঐতিহ্যের টানে আজও পুরুলিয়া ছাড়াও সুদূর ঝাড়খণ্ড থেকে বহু মানুষ এই নাককাটা কালীর পুজোয় ভিড় করেন। পুরুলিয়া শহরের সাত নম্বর ওয়ার্ডের মধ্য-পল্লীর পাঁড়ে গলির একেবারে শেষ প্রান্তে রয়েছে মায়ের এই মন্দির। এই মন্দিরের নাম শুনলেই অনেকের মনে কৌতূহল জাগে। কেন এই দেবীর নাম নাককাটা? এই প্রশ্নের উত্তরে পৌঁছতে হলে আমাদেরকে ফিরে যেতে হবে ইতিহাসের পাতায়।
কথিত আছে, প্রায় দু’শো বছর আগে এই এলাকা ছিল জনমানবহীন, নির্জন। এলাকা জুড়ে ছিল বিঘের পর বিঘে ধান জমি। আর এই ধান পাকলেই সেখানে হানা দিত ডাকাত দল। শুধু বিঘে বিঘে ফসল লুঠ হত তাই নয় বাসিন্দাদের বাড়িতেও লুঠপাট চালাত ডাকাতরা। বারংবার ক্ষতির মুখে পড়ায় তাদের মেহনতের সম্বল রক্ষা করতে এলাকার একটি অশ্বত্থ গাছের নীচে শ্যামাকালীর পুজো শুরু করেন এলাকাবাসী। এরপর থেকে ডাকাতরা গ্রামে লুঠ করতে এলেই নূপুরের আওয়াজ পাওয়া যেত। নূপুরের শব্দে ঘুম ভেঙে যেত এলাকাবাসীদের। এলাকাবাসীরা রুখে দাঁড়াতেই ভয়ে পালাত ডাকাত দল। এরূপ ঘটনা বারংবার ঘটায় ক্ষুব্ধ হয়ে যায় ডাকাতরা। কথিত আছে, আবারও একদিন একদল ডাকাত এই এলাকায় ধান কেটে লুঠ করার জন্য আসে। কিন্তু আবারও বাধা হয়ে দাঁড়ান মা কালী। তাতে ক্ষুব্ধ হয়ে ডাকাতরা তরোয়াল দিয়ে মায়ের মূর্তির নাক কেটে ফেলে।
তবে এই ঘটনার পর এক এক করে ডাকাত দলের সদস্যদের সঙ্গে ঘটে অঘটন। কারও মৃত্যু হয়, কারও আবার পরিবারে দেখা দেয় অভাব। তারপর থেকেই দেবীর ছিন্নভিন্ন মূর্তি নাককাটা কালী হিসেবে পূজিত হয়ে আসছে এই স্থানে। এখনও এই মন্দিরের পাথরের মূর্তিতে মায়ের নাক কাটা অবস্থায় দেখা যায়। এমনকি মন্দিরের চারপাশে মায়ের শরীরের বিভিন্ন অংশ ছড়িয়ে রয়েছে। এই অংশগুলিও পূজিত হয়। মন্দিরের সাথে জড়িয়ে রয়েছে অনেক লোককথা। কেউ কেউ বলেন, মায়ের আশীর্বাদে এই এলাকায় কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয় না। অনেকে আবার বলেন, এই মন্দিরে মানত করলে তা সফল হয়।
আজও অতীতের রেওয়াজ মেনে মা এখানে পুজো পান। এই মন্দিরের পুজো কেবল কালীপুজোর দিনই হয় এরকম নয়। প্রতি সপ্তাহে মঙ্গল ও শনিবারও মায়ের পুজো হয়। তবে পুজোর দিন এখানে প্রচুর ভক্তদের ভিড় জমে। এই মন্দিরে বলি প্রথারও প্রচলন আছে। সেই সঙ্গে এখানে কালীপুজোর পরের দিন বলির মাংস দিয়ে খিচুড়ি হয়। যে প্রসাদ পাওয়ার জন্য রীতিমতো হুড়োহুড়ি পড়ে যায় মন্দিরে।
চিত্র ঋণ – বিশ্বনাথ মাহাতো
Discussion about this post