রক্তদান জীবন দান। এই মন্ত্র সাথে নিয়েই এগিয়ে চলে সকল ব্লাড ব্যাংক। বহু সাধারন মানুষ এগিয়ে আসেন এই মহৎ কাজে। কিন্তু সেই রক্ত মুমূর্ষু রোগীদের কাছে না পৌছে, বিক্রি হচ্ছিল অর্থের বিনিময়ে। ঘটনাটি ঘটেছে নদীয়ার শক্তি নগর হাসপাতালে। ঘটনাটি ২০২১-এর ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের। রক্তের কালোবাজারি নিয়ে একটি অডিও ক্লিপ লিক হতেই সামনে চলে আসে ব্লাড ব্যাংকের কঙ্কালসার চেহারা। এই কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ে তিন জন ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্মীর নাম। ঘটনার প্রতিবাদে পথে নামেন একাধিক সামাজিক সংগঠন। যারা প্রতিনিয়ত রক্তদান শিবির আয়োজনের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্লাড ব্যাঙ্কে পৌছে দিচ্ছেন অমূল্য রক্ত। বিভিন্ন স্তরের প্রশাসনিক আধিকারিকদের কাছে ডেপুটেশন জমা দেওয়া হয়।

সম্প্রতি তাদের তিনজনের নামে নদীয়ার তিনটি জায়গা নবদ্বীপ, করিমপুর, বগুলাতে বদলির নোটিস জারি করা হয়। যার ফলে আন্দোলনের আঁচ ছড়িয়ে পড়েছে এই তিনটি জায়গায়। বিভিন্ন সমাজসেবী সংগঠনের পাশাপাশি আন্দোলনে সামিল হয়েছেন বহু সাধারন মানুষ। তাদের একটিই দাবি রক্ত কেলেঙ্কারির সাথে যুক্ত কাউকে তারা নিজের এলাকার ব্লাড ব্যাঙ্কে থাকতে দেবেন না। গত দুদিন ধরে নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হসপিটালে অবস্থান বিক্ষোভে সামিল হয়েছেন নবদ্বীপের ১০টির বেশী সংগঠন।

নবদ্বীপের নতুন প্রজন্ম স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সম্পাদিকা সুমনা মুখার্জীর কথায় – “স্থানীয় আধিকারিকরা উপযুক্ত পদক্ষেপ নেবেন জানিয়েছেন। যার জন্য আমরা সাময়িক আন্দোলন স্থগিত রাখছি। তবে আমাদের দাবি যদি সঠিক ভাবে না মেনে নেওয়া হয়, আমাদের আন্দোলন আরো জোরালো হবে।” নবদ্বীপের অন্যতম স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আগামীর সম্পাদক শুভঙ্কর চ্যাটার্জি জানান – “বিগত দু’দিন ধরে আমরা এই আন্দোলন চালাচ্ছি। আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য এই নীহাররঞ্জন ঘোষ নামক লোকটিকে কোনো ভাবেই নবদ্বীপ ব্লাড ব্যাঙ্কে আমরা থাকতে দেব না। নবদ্বীপের সকল সংগঠন ব্লাড ডোনেট করে সাধারণ মানুষের স্বার্থে কিন্তু যে মানুষ নিজের স্বার্থের জন্য এই রক্ত বিক্রি করে তাকে আমরা মানতে পারবো না।”
দীর্ঘ আন্দোলনের পর তিনজনের বদলিতে স্থগিতাদেশ জারি করা হয়েছে। তবে এই বদলির খবরে বেশ হতাশ এমার্জেন্সি ব্লাড সার্ভিস সহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনগুলি। যারা প্রথম থেকে এই আন্দোলনে অগ্রনী ভূমিকা পালন করেছিল। এমার্জেন্সি ব্লাড সার্ভিসের অন্যতম সদস্য ওসমান গনি খানের কথায় – “এই বদলিতে আমরা খুশী নই। আমরা চাই দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। যাতে ভবিষ্যতে এই কাজ আর কেউ না করে। আমাদের দাবী না মানা হলে আমরা আরো বৃহত্তর আন্দোলনে নামব।”
Discussion about this post