সাধে কী কবি বলেছিলেন, “বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি/ তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর”? বাংলা জাতি, সংস্কৃতির জায়গা থেকে যেভাবে বিভিন্নতার মিলনক্ষেত্র, একইভাবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যেও বিভন্নতার সম্ভার। বাংলা মানে পশ্চিম বাংলার সঙ্গে পূর্ব বাংলা বা এখনকার বাংলাদেশকেও কবি ধরেছিলেন। আজ তা ভাগ হয়ে গেলেই বা! ওপার আর এপার বাংলার রূপ-রস-গন্ধ আর মানুষের বিভিন্নতার মিলনের বদল হয়নি মোটেই। সেই বাংলাদেশেরই অপূর্ব প্রাকৃতিক রহস্যের ছোঁয়া পাওয়া যাবে সিলেটের জাফলং অঞ্চলে।

প্রকৃতির লীলাক্ষেত্র যেন রূপসী বাংলাদেশ। পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম পার্বত্য উপত্যকা, পাগলাঝোরা জলপ্রপাত, গহীন বনভূমি তো আছেই, আর রয়েছে বিশাল বিস্তৃত বদ্বীপ। অর্থাৎ, সমভূমি। আছে স্রোতস্বিনী নদী। তাই বোধহয় কবি বলেছেন, “সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে।/ সার্থক জনম মাগো, তোমায় ভালবেসে।” এই বাংলাদেশের উত্তরপূর্ব অঞ্চলে অবস্থিত সিলেট। আর সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার অন্তর্গত পর্যটনস্থল হল জাফলং। ভারতের মেঘালয় সীমান্ত ঘেঁষে খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত এই অঞ্চল পাহাড়, জঙ্গল আর নদীর অপূর্ব সম্মিলনস্থল।

বাংলাদেশে জাফলং পরিচিত ‘প্রকৃতির কন্যা’ বলে। এখানে অবস্থিত পিয়াইন নদীর হাঁটুজলে দাঁড়িয়ে মেঘে ঢাকা সবুজ পাহাড়ের চূড়া হাতছানি দেয়। অদূরেই মিলবে প্রাচীন ঝুলন্ত সেতু। বৃটিশ আমলে তৈরি এই সেতু সাক্ষী হয়ে আছে ১৮৯৭-এর ভূমিকম্পে সৃষ্টি হওয়া ডাউকি ফল্টের। ডাউকি পিয়াইনের শাখা নদী। নৌকা করে ডাউকি নদী ধরে কিছুটা গেলেই মিলবে মায়াবী সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা। পিয়াইন নদী পেরোলেই খাসিয়াদের গ্রাম। পাহাড়ের কোলে তাদের ঘরবাড়ির নির্মাণশৈলী আর পানের বরজের রূপ বিস্ময় জাগায়।

ঢাকার গাবতলী, মহাখালী, ফকিরাপুল, সায়েদাবাদ থেকে বাসে করে সিলেট যাওয়া যাবে। ট্রেনে যেতে চাইলে কমলাপুর কিংবা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে সিলেটগামী ট্রেনে উঠে পড়া যায়। সময় লাগে প্রায় ৬ থেকে ৮ ঘন্টা। সিলেটের কদমতলী এবং সোবহানীঘাট থেকে জাফলং-এর বাস ছাড়ে। সিএনজি ও লেগুনা সার্ভিসও রয়েছে। এগুলোর সঙ্গে মাইক্রোবাসের ব্যবস্থাও রয়েছে। রয়েছে রিজার্ভ গাড়িও। সময় লাগে প্রায় ২ ঘন্টা। জাফলং এ রয়েছে সরকারি রেস্ট হাউস, তাতে থাকতে হলে আগে থেকে কথা বলতে হয়। এছাড়া হোটেলে থাকার জন্য ফিরতে হবে সিলেটেই। কম খরচে ভ্রমণের আনন্দ নিতে তাই বেড়িয়ে পরুন। প্রকৃতির কাছাকাছি যাওয়ার জন্য এই স্থান আদর্শ!
Discussion about this post