ঘরপোড়া গরু, সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পাবেই! বিভেদকে হিংসার রূপ ধরে ছড়িয়ে পড়তে দেখে ফেলেছেন তাঁরা আগেই। শান্তিপূর্ণ যে এলাকায় তাঁরা মিলেমিশে থাকতেই অভ্যস্ত, সেখানে কোনো অশান্তি তাঁরা চান না। তাই হিন্দু মন্দির বাঁচাতে এবার হাই কোর্টের দ্বারস্থ হলেন ঐ এলাকারই মুসলিম বাসিন্দারা। এই মন্দির ভাঙাকে কেন্দ্র করে এলাকায় যাতে কোনও রকম সাম্প্রদায়িক অশান্তি না ছড়ায়, তা দেখতেও আদালতের কাছে আর্জি জানিয়েছেন তাঁরা!
ঘটনাটি দিল্লির জামিয়া নগরের অন্তর্গত ২০৬ নং ওয়ার্ড অর্থাৎ নূর নগর এলাকার। ওয়ার্ড কমিটির কিছু সদস্য সম্প্রতি দিল্লি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। সেখানে নিজেদের আবেদনে তাঁরা জানিয়েছেন, এলাকার কিছু অসাধু প্রোমোটার বহুতল নির্মাণের উদ্দেশ্যে স্থানীয় দুষ্কৃতীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভেঙে ফেলার চেষ্টা করছে একটি মন্দির। ইতিমধ্যেই মন্দির চত্বরে থাকা একটি ধর্মশালা তারা ভেঙে ফেলেছে। মন্দিরের গর্ভগৃহে থাকা ৮-১০টি মূর্তিও তারা সরিয়ে ফেলেছে রাতারাতি। পুরো এলাকাটি সমতল করা হয়েছে, যাতে দ্রুত দখল করা যায় জমিটি। এমতাবস্থায় মন্দিরটি বাঁচাতে আদালতের কাছে হস্তক্ষেপের আর্জি জানিয়েছেন আবেদনকারীরা।
আবেদনে তাঁরা আরও জানিয়েছেন, ১৯৭০ সালে নূর নগরে স্থাপিত হয়েছিল মন্দিরটি। ডিডিএ লেআউট পরিকল্পনায় তা চিহ্নিতও করা আছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিদিনই সেখানে পুজো ও কীর্তন হতে দেখতে অভ্যস্ত সকলে। এরই লাগোয়া আরও একটি এলাকায় ইতিমধ্যেই একটি মন্দির ভেঙে অবৈধ নির্মাণ শুরু হয়ে গিয়েছে। ফলে এই মন্দিরটিও যে কোনও সময়ে ভেঙে ফেলা হতে পারে, এমনই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাই প্রতিবেশীদের ভাবাবেগে আঘাত রুখতে তাঁদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন।
আবেদনটি পাওয়া মাত্রই নড়েচড়ে বসেছে দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব সচদেবের বেঞ্চ। ২৪ সেপ্টেম্বর বেঞ্চের তরফে দিল্লি পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কোনও অবৈধ অনুপ্রবেশকারী যেন ঐ মন্দির ও সংলগ্ন জমি বেদখল না করতে পারে। নিশ্চিত করতে হবে যাতে মন্দিরটি অক্ষত অবস্থায় থাকে। পাশাপাশি এলাকায় যাতে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকে, সেদিকে কড়া নজর রাখতেও নির্দেশ দিয়েছে আদালত। গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন বিতর্কিত বিষয়কে কেন্দ্র করে যে দেশে বারবার ছড়িয়েছে সাম্প্রদায়িকতার আগুন, তারই রাজধানীর বুকে মানবিকতার এই দৃষ্টান্ত যেন ক্ষতস্থানে কিছুটা প্রলেপ – এমনই মত দেশবাসীর।
Discussion about this post