‘সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই’-কবি চন্ডিদাসের এই বিখ্যাত উক্তিটিকে বর্তমানের এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে যথার্থ প্রমাণ করলেন কেরালার ইরিঞ্জালাকুদা শহরের অধিবাসী সাবিনা রহমান। যেখানে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে আজও মানুষের বিচার হয়,সেখানেই মাত্র ঊনত্রিশ বছর বয়সী এই ভদ্রমহিলা প্রতিনিয়ত এমন কাজ করছেন যা বেশিরভাগ লোকেদের কাছে সংকোচ এবং লজ্জার কারণ! কেরালার ত্রিচূর জেলার ইরিঞ্জালাকুদায় হিন্দু শ্মশানে প্রতিদিন সহস্র মৃত্যুপথযাত্রীদের চিরশান্তির উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করে চলেছেন তিনি।
একটি আট বছরের ছোট্ট ছেলে এবং স্বামীকে নিয়ে সাবিনার সংসার। মহামারী কবলিত এই সমাজে বেকারত্বের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় যখন তার সংসারের আর্থিক সংকট চরম শিখরে তখন পেটের দায়ে চাকরির সন্ধানে বেরিয়ে পড়েন। তিনি জানতে পেরেছিলেন যে স্থানীয় হিন্দু এজভা সম্প্রদায়ের নিয়ন্ত্রিত শ্মশানঘরে একজন কেরাণীর পদ ফাঁকা রয়েছে। এরপরই তিনি সেখানে আবেদন করেন এবং সৌভাগ্যক্রমে চাকরিটি পেয়েও যান। প্রথমদিকে ক্লার্কের পদে নিযুক্ত হলেও পরবর্তীকালে কেরলের প্রথম শবদেহকারী মহিলা হিসাবে পরিচিত হয়েছিলেন। মহামারীর প্রভাবে কেরালা ভয়াবহ মূর্তি ধারণ করলে সাবিনা মৃতের শেষকৃত্য সম্পন্ন করার কাজ করে গিয়েছেন দিনের পর দিন। তিনি কেবল শেষকৃত্য জ্বালিয়ে দেননি, শোকসন্তপ্তকে সান্ত্বনাও দিয়েছেন।
যেহেতু হিন্দু রীতিনীতি অনুযায়ী মহিলাদের শ্মশানে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় না, তাই সাবিনার এরকম একটি কাজের সিদ্ধান্ত সমাজ খুব একটা সুনজরে দেখেনি। বিশেষতঃ মুসলিম সমাজে এর তীব্র সমালোচনা করা হয়। তবুও তিনি তার সিদ্ধান্ত থেকে সরে যাননি। তার এই সিদ্ধান্তে পাশে থেকেছিলেন স্বামী কুজনিকান্ডিল ভীতিল রহমান। সাবিনার বক্তব্য, “একটি শরীর পরিষ্কার করতে এবং এর ছাই পেতে দুই ঘন্টা সময় লাগে। মহামারীটির দ্বিতীয় পর্বে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণে এটি সত্যিই দুঃখজনক ও ভয়াবহ পরিস্থিতি। মৃত্যুতে মর্যাদাবোধ থাকা উচিত, তাই আমরা যতটা সম্ভব লোককে সাহায্য করতে চাই। আমি এই বছর আমার সমস্ত রোজা অনুষ্ঠানও বজায় রাখতে পারিনি, আমার কাছে আমার কাজ ইবাদৎ এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।” তার এই চিন্তাধারা সমাজের চোখে এক অনন্য নজির।
Discussion about this post