শিয়রে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব, হাওড়ার জগৎবল্লভপুরের পার্বতীপুর গ্রামের মুসলমান মহল্লায় এখন হাঁফ ফেলার সময় নেই। কারণ এই গ্রামের কমবেশি ৪০টি মুসলমান পরিবার প্রতিমার নকল চুল তৈরির সঙ্গে যুক্ত। পরিবারগুলির কেউই সেকুলারিজম বা সম্প্রীতির মতো ভারী শব্দের মানে বোঝেন না, ওদের একমাত্র বোধগম্য ‘পেটের টান’। সেই টানেই কয়েক-দশক ধরে সম্প্রীতির জাল বুনছেন প্রত্যেকে।
একই চিত্র দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার মীরপুর গ্রামেও। রাস্তার ধারে বাঁশের খুঁটিতে থরে থরে ঝোলানো কালো রঙের বিনুনি। রাজ্যের কুমোরটুলি ছাড়াও যা যায় রাজ্যের অন্যত্র, এমনকি ভিন রাজ্যেও। যা দিয়েই সেজে ওঠেন ‘আমাদের’ দূর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতীরা। অবশ্য আমরা-ওরা ভেদাভেদ কিংবা মেলবন্ধন কিছুই মাথায় ঢোকে না পার্বতীপুর, মীরপুরের শিল্পীদের। নির্দ্বিধায় তাঁরা বলে ওঠেন ওসব কথা বুঝি না। এই কাজ আমাদের পেটের ভাত যোগায়, ব্যাস।
গত বছর সেই ব্যবসায় থাবা বসিয়েছিল করোনা। অতিমারীতে যথেষ্ট ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন তারা। এবার বাধ সেধেছে বৃষ্টি, সঙ্গে মাথাচাড়া দিয়ে আবার বাড়ছে করোনা সংক্রমণও। এবছর দেরিতে বর্ষা আসায় কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত পাটের চুল ব্যবসায়ীরা। সারাদিন ঝিরঝির করে বৃষ্টি হওয়ায় চুল শুকোতে সমস্যা হচ্ছে। এত সমস্যা থাকলেও হাল ছাড়তে নারাজ পার্বতীপুর, মীরপুর গ্রামের নকল চুল তৈরির কারিগরেরা। ফলে এবারও শুধু দুর্গা নয়, কালী-জগদ্ধাত্রী-সরস্বতী প্রতিমার মাথাতেও শোভা পাবে ‘মুসলমান’ শিল্পীদের তৈরি চুল। আক্ষরিক অর্থেই ফুটে উঠবে, ‘ধর্ম হোক যার যার, উৎসব সবার’।
Discussion about this post