শান্তিপুরের তাঁতের কথা শোনেনি এমন মানুষ হাতে গোনা। তবে আজও বেঁচে থাকা এই তাঁত শিল্পের পেছনে কিন্তু লুকিয়ে আছে অজানা এক কাহিনী। এ গল্প শুনতে হলে একটু পিছিয়ে যেতে হয়। পৌঁছে যেতে হয় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রাজত্বে। এ কোম্পানি শান্তিপুরে আসার সময়ে সেখানে তাঁতিদের সংখ্যা ছিল প্রায় এগারো হাজার। তার মধ্যে ৭০% মহাজন আর বাকি ৩০% ছিল নিজস্ব ব্যবসায় রত।
সাহেবরা ব্যবসা বাড়াতে কুঠি প্রতিষ্ঠার আগে ব্যবসার হাল ছিল জনৈক সান্যাল উপাধির এক ব্যাক্তির হাতে। এ পদের নাম ছিল গোমস্তা। তো এই গোমস্তারা নিজের লাভ বাড়িয়ে নিতে শুরু করে তাঁতিদের ঠকানো। কাপড় খারাপ, কোম্পানি দাম কম দিয়েছে ইত্যাদি ছিল তাদের অজুহাত। এ ঘটনা বুঝতে পেরে জমানো রাগ একত্রিত করে শান্তিপুরে প্রথম জেগে ওঠে আন্দোলন। তাঁতিদের দাবি ছিল এ অত্যাচার বন্ধ না করলে তারা কোম্পানিকে কাপড় বেচবে না।
অন্যদিকে, ফরাসি আর ওলন্দাজদের ব্যবসার দাপট তখন রমরমিয়ে বাড়ছে। তাই কোম্পানি বাধ্য হয় তাঁতিদের দাবি মেনে নিতে। জয় হল শান্তিপুরের প্রথম জন সংগ্রাম। তবে মন থেকে না চাইলে কি আর সত্যিই কিছু দেওয়া যায়? এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। লন্ডনে ব্যবস্থা নেওয়া হয় যাতে তাঁতিরা আর আন্দোলন করতেই না পারে। ১৭৮৭ সালে তাদের এই আন্দোলন রুখতে নতুন আইন চালু হল। শুরু হলো অত্যাচার। বাড়ি ঘর পুড়িয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে টাকা মেরে দেওয়া সবই চললো। এ ঘটনার প্রতিবাদে আবারও জনমত গড়ে উঠলো। জন্মদ নিল শান্তিপুরের দ্বিতীয় গণ আন্দোলন।
এ গণ সংগ্রাম অবশ্য নিজের বিজয় পতাকা উড়িয়ে নিতে পেরেছিল। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নিরস্ত হয়। ব্যবসা থেকে তার পাট চুকে যায়। তবে এত আন্দোলনের পরেও বর্তমান তাঁত শিল্পের বর্তমান অবস্থা মোটেই ভালো নয়। করোনার প্রকোপ থেকে রক্ষা পেতে কোনো আন্দোলনই কার্যকর নয়। অতীতের জয় এই মে দিবসে শ্রমিকের জয়গান হয়ে ফিরে আসুক এটাই কাম্য।
Discussion about this post