প্রত্যন্ত গ্রাম। গ্রামের মানুষরা বড়োই ভিতু। ভূতের ভয়ে সকলেই জুজু। ভয় শুরু হয়েছিল গ্রামের মাস্টারমশাইকে দিয়ে। তিনিই প্রথম বলেন গ্রামের সবচেয়ে প্রাচীন বটগাছটি আসলে জ্যান্ত। রাত্রি হলেই তার হাত পা গজায়। মানুষের পিছু ধাওয়া করে। সন্ধ্যে নামলেই বংশানুক্রমে গ্রামের মানুষ বটগাছের ধার মাড়ায় না। তারপর জানা যায় মাস্টারমশাই নেশা করে ভুল দেখেছিলেন। যেহেতু তিনি গ্রামের সম্মানীয় মাস্টারমশাই, তাই আর আসল কথা খুলে বলতে পারেন নি। যুগের পর যুগ বাহিত হয়েছে, অতিরঞ্জিত হয়ে এসেছে ভয় আর ভয়ের গল্প।
গল্পটা চেনা লাগছে, তাই তো? হ্যাঁ, সিনেমা বা ওয়েব সিরিজ দেখার অভ্যেস থাকলে এই গল্প আপনার চেনা লাগাটাই স্বাভাবিক। কারণ, গল্পটা খুবই জনপ্রিয় হিন্দি ওয়েব সিরিজ ‘পঞ্চায়েতে’র একটি অংশ। কিন্তু এই গল্পই যদি সত্যি ঘটে? হ্যাঁ, সত্যিই ঘটেছে। ঘটেছে এই বাংলারই বেগুনকোদর নামের স্টেশনে। টানা প্রায় ৫০ থেকে ৫৬ বছর শুধু ভূতের ভয়ে বন্ধ ছিল এই স্টেশন। পরবর্তীকালে তা আবার খুলেছে। আর ভূতের ভয়ের আসল রহস্য উন্মোচন করেছেন প্রশাসন, পুলিশ, রেল ও বিজ্ঞান মঞ্চ।
বেগুনকোদর রেলওয়ে স্টেশনটি ভারতীয় দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়ের রাঁচি বিভাগের একটি রেলওয়ে স্টেশন। স্টেশনটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া জেলার ঝালদা ও বেগুনকোদর শহরের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করে। স্টেশনটি তৈরি হয়েছিল ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময়। তৈরির কয়েক বছরের মধ্যেই তা বন্ধ হয়ে যায়। স্টেশনে নাকি শোনা যায় অশরীরী কণ্ঠ। অনেক সময় গা ঘেঁষে চলে যায় অশরীরী কেউ! আচমকা ধাক্কা খেয়েও কাউকে দেখা যায়না। মৃত মানুষদের দেখতে পাওয়া। ইত্যাদি অসংখ্য গল্প তৈরি হয়েছে মানুষের মুখে মুখে। কিন্তু প্রমাণ মেলেনি।
দীর্ঘদিনের এই ভয়ের পরিবেশের মধ্যেই ২০১৭ সালে স্টেশনে রাত জেগে এই ভয়কে ভুল প্রমাণিত করতে চেয়েছিলেন প্রশাসন ও বিজ্ঞান মঞ্চ। এতে তাঁরা সফলও হন। প্রমাণিত হয়, ভূত নয় সবই মনুষ্য এবং প্রকৃতিসৃষ্ট। অনেকের দাবি রেলকর্মীরাই এইসব গল্প বানিয়েছেন, যাতে তাঁদের এই অঞ্চলে বদলি না করা হয়। আবার বিজ্ঞান মঞ্চ মনে করছে অসামাজিক কাজকর্মের জন্যই ভূতের ভয় রটানো হয়েছে ইচ্ছে করেই। দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশের কাছে আবেদন জানিয়েছে তারা। বর্তমানে ট্রেন চললেও, ভুতুড়ে স্টেশন হিসেবেই পর্যটকদের আকৃষ্ট করে এই স্টেশনটি।
Discussion about this post