মর্গ শুনলেই সবাই কেমন আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। ভূত প্রেত আত্মাতে অবিশ্বাসীরাও ভয়ে কাঠ হয়ে যান। যদিও তার জন্য দায়ী মর্গের ভেতরের ওই ভয়ঙ্কর থমথমে গুমোট পরিবেশটি। বাইরের খোলামেলা পরিবেশের সাথে এর যেন কোনো লেনদেন নেই। ঘরের তাপমাত্রাও ২°-৪° সেলসিয়াসের কাছাকাছি। আবদ্ধ ঘরে একের পর এক ব্যাঙ্কের মতো সাজানো লকার। আর লকারে টান মারলেই মৃত ব্যক্তির বীভৎস মুখ এবং নিস্তেজ শরীর। তাই দুঃস্বপ্নেও কেউ এই মর্গে পা রাখতে চান না। কিন্তু ওদের যে ওখানে রোজ যেতে হয়। মৃতদেহগুলোর সাথেই ওদের রোজকার ওঠাবসা। অথচ সচল সজীব মানুষরা কোনোদিনই ওদের খোঁজ রাখে না। আজ সেই ব্যাকস্টেজে থাকা মর্গের কর্মচারীদের মানুষের পাশে থাকার সহানুভুতি তারিফের যোগ্য হয়ে উঠেছে।
ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে আবারও রাজ্য জুড়ে লকডাউন। জুতো সেলাই থেকে চন্ডীপাঠ সমস্ত রকম ক্ষুদ্র উপার্জনই আজ মার খাচ্ছে। জীবন বাঁচাতে জীবিকা আজ লাঠে উঠেছে। সংসারের পেট চালাতে পোহাতে হচ্ছে বিস্তর ঝক্কি। এদিকে সব্জি থেকে নিত্যদিনের জিনিসপত্র বাজারে সবকিছুরই দাম ঊর্ধ্বমুখী। খেটে খাওয়া মানুষগুলোর মুখে রোজ খাওয়ার জোটাই এখন ভাগ্যের ব্যাপার। এই সংকটকালেই সাহায্যের ঝুলি নিয়ে এগিয়ে এলেন মৃত্যুপুরীর দূত মর্গের ওই কর্মীরাই। তাঁদের থেকে সাহায্য নিয়ে QSYN(Quarantined Student-Youth Network) মহম্মদ আলী পার্কের সামনে বিতরণ করল ভাত তরকারি। লুঙ্গি কিংবা বারমুডা পরে গলায় গামছা জড়িয়ে মুখে মাস্ক পরে এক মুঠো খাবারের আশায় হাজির বহু মানুষ । কলেজ স্ট্রীট পিপলস কিচেনে চতুর্থ দিনের বানানো এই খাবার উঠল প্রায় ৪৫০ জনের মুখে। QSYN এর তরফে সায়ন চক্রবর্তী জানান, “এই দুঃসময়ে অক্সিজেন, ভ্যাকসিনের সঙ্গে খাবারও সমানভাবেই দরকার। শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে গিয়ে মানবিক সংহতিতে ঘাটতি যেন না হয়। পারস্পরিক যত্ন সহানুভুতি সহযোগিতার ভীষণ প্রয়োজন।”
এই কঠিন পরিস্থিতিতে কেউ যাতে অভুক্ত না থাকে তার দায়ভার একমাত্র মানুষেরই। আর সেই মানবিকতা থেকেই আজ প্রত্যেকে তার সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর। দিনের পর দিন রান্না হচ্ছে বিশাল মাপের হাঁড়ি কড়াইতে। অলিতে গলিতে খাবার বিতরণ করছেন বহু স্বেছাসেবী উদ্যোগ। আর তার মধ্যেই ‘মুদ্দাঘর’-এর কর্মীদের এই সাহায্য মানুষের মনের জোর বহুগুণ বাড়িয়ে তুলেছে। মর্গে থাকা জ্যান্ত কর্মীদের কঠোরতার আড়ালে এক কোমল মনের পরিচয় পেল সমাজ।
Discussion about this post