রূপকথার গল্প জিনিসটা আমাদের প্রত্যেকেরই শৈশবের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে। ছোটথেকে দাদু ঠাকুমার মুখে শোনা রাজকুমার-রাজকুমারী, ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমী, সিন্ডারেলা কিংবা স্নো হোয়াইট কোনোটিই আমাদের মন থেকে মুছে যায় না। বড় হওয়ার পরেও সেই রূপকথার গল্প গুলোর প্রতি সমপরিমাণ ভালবাসা রয়ে যায়, নিয়ে যায় শৈশব স্মৃতিচারণে। বলা যেতে পারে রূপকথা হল এমন একটি অভাবনীয় গল্প বা ঘটনা যা শেষে ভালো এবং সুখী সমাপ্তি থাকবে। কিন্তু বাস্তবে আমাদের সকলের প্রিয় স্নো হোয়াইটের গল্পে সুখী সমাপ্তি ঘটেনি। রাজকন্যা স্নো হোয়াইট ছিলেন অপূর্ব সুন্দরী। সৎ মায়ের হিংসার কারণে তাকে থাকতে হয় জঙ্গলে। সেখানেই তার দেখা হয় সাত বামনের সঙ্গে। সাত বামন আর অপূর্ব সুন্দরী স্নো হোয়াইটকে নিয়েই পুরো কাহিনী। জানেন কি? স্নো হোয়াইটের এই গল্প কোনো রূপকথা নয়। বাস্তবেই ঘটেছে এমন ঘটনা। এমনটাই দাবি করেন একজন জার্মান ঐতিহাসিক একার্ডহ্যান্ড স্যান্ডার।
বাস্তবে স্নো হোয়াইটের চরিএটি মার্গারেট ফন ওয়াল্ডেকের জীবনের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল। যিনি ১৫৩৩ সালে ফিলিপ চতুর্থের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। মার্গারেট এক রাজপুত্রের প্রেমে পড়েন। যিনি পরবর্তীতে স্পেনের দ্বিতীয় ফিলিপ হবেন। তবে মার্গারেটের বাবা এবং সৎ মা এই সম্পর্ক একেবারেই মেনে নেননি।
মার্গারেট ২১ বছর বয়সে অপ্রত্যাশিতভাবে মারা যায়। বলা হয়ে থাকে এই ষড়যন্ত্রের মূলে ছিল তার সৎ মা। তবে ঐতিহাসিক প্রতিবেদন অনুযায়ী যেহেতু স্পেনের রাজা মার্গারেটের এই রোমান্টিক সম্পর্কের বিরুদ্ধে ছিলেন তাই তিনি মার্গারেটকে হত্যার নির্দেশ দেন গুপ্তচরদের এবং বিষক্রিয়ার ফলে রাজকুমারী মার্গারেটের মৃত্যু ঘটে। আর গল্পের সেই সাত বামুন আসলে কী জানেন? মার্গারেটের বাবার বেশ কয়েকটি তামার খনি ছিল। যেখানে বামন শ্রেণির অনেক দাস নিয়োজিত ছিল। দুর্বল থাকার কারণে অল্প বয়সেই অনেকের মৃত্যু ঘটে। তবে যারা বেঁচে ছিলেন তারা পুষ্টিহীনতা এবং কঠোর শারীরিক পরিশ্রম থেকে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়ে। সেখান থেকেই এই গল্পের সঙ্গে বামনদের যুক্ত করা হয়েছে বলে মনে করা হয়।
ওয়ার্ল্ড ডিজনির অ্যানিমেটেড ফিচার ফিল্ম স্নো হোয়াইট ১৯৩৭ সালে মুক্তি পায়, যা সারা বিশ্বে এই আখ্যানকে জনপ্রিয় করে তোলে। গল্পে এক রাজপুত্র একদিন দেখলেন কস্কেটে স্নো হোয়াইট। রাজপুত্র তখনই স্নো হোয়াইটের প্রতি মুগ্ধ হন এবং তার বিষক্রিয়ার বিষয়টি জেনে দুঃখিত হয়ে পড়েন আর বামুনদের থেকে অনুমতি চান যাতে তিনি স্নো হোয়াইটের অন্তেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেন। কফিন বহন করার সময় স্নো হোয়াইটের গলা থেকে বিষাক্ত আপেলটি পড়ে যায় আর রাজকুমারী জেগে ওঠে। রূপকথার রীতিতে রাজকুমারী আর যুবরাজ এরপর সুখে শান্তিতে বসবাস করে। বাস্তবে মার্গারেটের জীবনে ঘটেনি এমন কোন চমৎকার, আর এখানেই গল্পের ট্র্যাজেডি।
Discussion about this post