‘বিশ্বাসে মেলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর ’ প্রবাদটি শোনেননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তবে এই বিশ্বাসের জেরেই দিনের পর দিন অন্ধবিশ্বাসের শিকার হয় বহু মানুষ। ভারতবর্ষে এমন অনেক জায়গা আছে যেখানকার মানুষ বিজ্ঞান, ডাক্তার, চিকিৎসা এসব বিষয়ে অবগত নন। তারা মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন তুকতাক, কালা যাদুই তাদের রক্ষাকবচ! আমরা একবিংশ শতাব্দীতে! অথচ কুসংস্কার রয়েই গেছে মনের মধ্যে। ওড়িশার সুন্দরগড় জেলা আজ থেকে প্রায় ১০ বছর আগে এমনটাই ছিল। জ্বর হোক বা মারণ রোগ, সমাধান ওই একজনই – ওঝা বা তান্ত্রিক; যাদের ভন্ড বললেও কম বলা হবে। কত মানুষের প্রাণ গিয়েছে এই অন্ধবিশ্বাসের জেরে।
সেখানেই আশার আলো হয়ে উঠেছিলেন মাতিলদা কুল্লু। দরিদ্র আদিবাসী পরিবারের এই মেয়েটি নিতান্তই টাকা উপার্জনের তাগিদে যোগ দিয়েছিলেন ‘আশা প্রকল্পে’। কিন্তু নিছক কর্তব্য কখন ভালোবাসায় পরিণত হলো, তা বুঝতে পারেননি তিনি নিজেই। এই ভালোবাসা থেকেই দায়িত্ববোধ অনেক বেড়ে যায় মাতিলদার। হাজার বাধাকে উপেক্ষা করে গ্রামে গ্রামে গিয়ে প্রচার করতে থাকেন বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা পদ্ধতির। তবে গ্রামের নিরক্ষর, সাধারণ মানুষদের মন থেকে কুসংস্কার, জাতিভেদ মানসিকতা বের করা মোটেই সহজ ছিল না। তার উপর দোসর ছিল কালা যাদু, তুকতাককে ঘিরে গড়ে ওঠা ব্যবসার রক্ষীদের কড়া হুমকি। তবে “আমরা নারী আমরা পারি”, মাতিলদা সব বাধাকে জয় করে সত্যি প্রমাণ করেছেন এই কথাটিকে।
করোনা পরিস্থিতিতেও চালিয়ে গিয়েছেন নিজের প্রচার। বদল এনেছেন একটু একটু করে। গ্রামে ডাক্তার ডাকা থেকে প্রসূতি নারীদের সিজারিয়ান বার্থের জন্য রাজি করানো, অসাধ্য সাধন করেছেন একা লড়াই করেই। মাতিলদার ঝুলিতে এসেছে আন্তর্জাতিক সম্মান – ফোর্বস ইন্ডিয়ার ডব্লুপাওয়ার তালিকায় জায়গা পেয়েছেন। স্থান করেছেন ফোর্বস ইন্ডিয়ার ‘সাহসী নারীদের’ তালিকায়।
বর্তমানে বকেয়া মজুরির জন্যও প্রতিবাদ করছেন মাতিলদা। ওড়িশার ৪৭ হাজার আশাকর্মী গত দু’বছর ধরে তাদের প্রাপ্য বেতন পাননি। সেই নিয়েই গলা তুলেছেন মাতিলদা। সুন্দরগড় আজ নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছে আর এই নতুন স্বপ্নের নৌকার মাঝি বছর ৪৫ এর মাতিলদা কুল্লু। লড়ে চলেছেন ‘একদিন বদল আসবেই’ এই মন্ত্র নিয়ে।
Discussion about this post