ফিফা বিশ্বকাপ বলতে পুরুষদের বিশ্বকাপকেই বোঝায়। কেন বলছি? কারণ প্রতি চার বছর অন্তর পৃথিবীর যাবতীয় প্রতিবন্ধকতার ভিতরেও, মহা সমারোহে যে বিশ্বকাপ আমরা দেখি, সেখানে কোথাও ‘মেন্স’ উল্লেখ থাকেনা। এখনও একটি ওয়ার্ল্ড কাপ চলছে। খেলছেন মহিলারা। সেই নিয়ে উত্তেজনা তো দূরের কথা, অর্ধেক মানুষ জানেনও না। ফিফা সেই প্রতিযোগিতার সামনে লিখেছে ‘উইমেন্স’। অর্থাৎ, ফুটবল ওয়ার্ল্ড কাপ মানেই তা পুরুষেরই। মহিলারা খেললে তা বিশেষ উল্লেখ্য মাত্র। মজার বিষয় এই যে, বিখ্যাত সব পুরুষ ফুটবলারকে বহু আগে ছাড়িয়ে গেছেন এক মহিলা ফুটবলার। মহিলা ফুটবলের জগতে তো বটেই, এমনকি ফুটবলের রাজা পেলেকেও ছাড়িয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতার সিংহাসন দখল করে বসে আছেন এই ব্রাজিলিয় মহিলা। তিনি মার্তা ভিয়েরা ডি সিলভা। সর্বকালের সেরা বিশ্ব ফুটবলের এই তারকা বিদায় নিলেন ফুটবল থেকে। একটি যুগ শেষ হলো যেন।
ব্রাজিল শৈল্পিক ফুটবলের দেশ। কিন্তু মহিলা হিসেবে লড়াইটা ব্রাজিলেও যা, আর সব দেশেও অপরিবর্তিত। কোথাও কিছুটা কম, কোথাও কিছুটা বেশি। মার্তার জন্ম ১৯৮৬ সালে। ব্রাজিলের অন্য সব তারকার মতই রাস্তায় রাস্তায় খেলার মধ্য দিয়ে ফুটবলে হাতেখড়ি হয়েছিল। সেই ছোটো বয়সেই তাঁর দুর্দান্ত স্কিলে নাস্তানাবুদ হতো সকলে। ফুটবল কোচ হেলেনা পাচেকোর তত্ত্বাবধানে ট্রেনিং শুরু হয় মার্তার। ১৪ বছর বয়সেই ভাস্কো দা গামা মহিলা ক্লাবে যোগদান। পরবর্তীকালে সান্তাক্রুজ, উমেয়া আইকে, লস অ্যাঞ্জেলেস সোল, স্যান্টোসের মতো দলের হয়েও ফুটবল খেলেছেন তিনি। ক্লাব ফুটবলের পাশাপাশি জাতীয় দলের হয়েও মার্তা সমান উজ্জ্বল। ১১৫ টি গোল নিয়ে ব্রাজিলের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা তিনিই। বিশ্বকাপের ইতিহাসে পুরুষ ও নারী দল মিলিয়ে মার্তা সর্বকালের সর্বোচ্চ ১৭ গোল করে ইতিহাস রচনা করেছেন। তাঁর থেকে একটি কম গোল রয়েছে জার্মান ফুটবলার মিরোস্লাভ ক্লোজের। গোল্ডেন বুট থেকে শুরু করে আরো অসংখ্য পুরস্কার তাঁর ঝুলিতে। পেলে নিজেই মার্তার ডাকনাম দিয়েছিলেন ‘পেলে ইন স্কার্টস’।
২০২৩ বিশ্বকাপে ব্রাজিল ছিটকে গেছে প্রতিযোগিতা থেকে। আর ৩৭ বছরের মার্তা জানিয়েছেন, এটিই ছিল তাঁর কেরিয়ারের শেষ ম্যাচ। সারাজীবন ধরে তিনি তাঁর খেলা দিয়ে, জীবনযাপন দিয়ে প্রজন্মের পর প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করে এসেছেন, পিছিয়ে পড়া মেয়েদের উৎসাহ দিয়ে এসেছেন। মাঠ থেকে বিদায় নেওয়ার প্রাক্কালে তিনি বলেছেন, তাঁর চলা শেষ হলেও, মেয়েদের জন্য এটাই শুরু। মিডিয়াকে ইঙ্গিত করে মার্তা বলেছেন, “আমি যখন খেলা শুরু করি, আমার সামনে কোনো আদর্শ মহিলা খেলোয়াড় ছিলেন না, কারণ আপনারা আমাদের সেই জায়গায় পৌঁছতেই দেননি।” আজও স্পষ্টতই সেই ফাঁক রয়ে গেছে। শুধু এক একটা সময়ে মার্তার মত মানুষেরা আমাদের স্বপ্ন দেখিয়ে চলেন।
Discussion about this post