গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে যে শিল্প তার নাম মৃৎশিল্প। বাংলার বহু বছরের ঐতিহ্যবাহী এক শিল্প। আজ থেকে কয়েক দশক আগেও গ্রামবাংলার প্রতিটি বাড়িতে শোভা পেত মাটির তৈরি নানা আসবাব পত্র থেকে শুরু করে মাটির খেলনা, পুতুল সবকিছুই। তবে কালের নিয়ম ভাঙতে পারে এ কার সাধ্যি! আজ বিভিন্ন ধাতু ও প্লাস্টিক-ফাইবারের যুগে হাতে ঘোরানো চাকায় তৈরি মাটির জিনিস কেবল শৌখিনতার প্রতীক। নেই আর সেই চাহিদা, আর না দেখা যায় লাভের মুখ। তাই কারিগররাও মুখ ফিরিয়েছেন এই মৃৎশিল্প থেকে। তবে হাওড়া জেলার বাইনান অঞ্চলের পালপাড়ায় ঢুঁ মারলে খোঁজ পেতে পারেন ব্যতিক্রমী এক শিল্পীকে। তিনি মাটির শিল্পকে আজও বাঁচিয়ে রেখেছেন তো বটেই। তার সঙ্গে টিকিয়ে রেখেছেন একটি হাতে ঘোরানো চাকা, যা আজকের দিনে লুপ্তপ্রায়।
সেই ব্যতিক্রমী শিল্পীর নাম মন্টু পাল। বয়স ৮৫ বছর, নেহাৎ কম নয়। আগে প্রতিদিন একশো অথবা দেড়শোটা করে তৈরি করতেন মাটির জিনিসপত্র। হাতে ঘোরানো চাকাই ছিল তাঁর একমাত্র অস্ত্র। এখনও এই চাকাকে তিনি সম্বল করে রেখেছেন। তবে বয়সের ভারে কুড়ি থেকে পঁচিশটার বেশি জিনিস তৈরি করতে পারেন না আর। একটা সময় ছিল যখন হাওড়ার বেশ কয়েকটা বাড়িতে মাটির জিনিস তৈরি হয় ঢের। চাহিদাও ছিল আকাশছোঁয়া। তবে এখন সেসব অতীত। জোগান থাকলেও লাভের কোনো আশা নেই। এমনকি মন্টু বাবুর তৈরি মাটির জিনিস কলকাতার বাজারে বেশি দামে বিক্রি হলেও তাঁর আয়ের বেহাল দশা। তাই নতুন করে এই কাজে আর লোক লাগানোর কথা চিন্তাও করেননি তিনি।
তবে তিনি তাঁর সেজ ছেলেকে নিজের হাতেই কাজ শিখিয়েছেন, তিনিও এই কাজেই যুক্ত। তবে আয় খুবই কম। বেশ কয়েক দশক ধরে এই শিল্পের চাহিদা গিয়ে ঠেকেছে তলানিতে। তাই যারা বছরের পর বছর ধরে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত, তারাও আর নতুন প্রজন্মকে এই কাজ শেখানোর কথা ভুলেও ভাবেন না। তাই প্রবীণ মৃৎশিল্পী মন্টু পালের আশঙ্কা, আগামীদিনে হয়তো এই শিল্প চিরতরে মুছে যাবে গ্রাম বাংলার বুক থেকে।
Discussion about this post