সালটা ১৯৯৬। উত্তর কলকাতার এক সকাল। জোড়াসাঁকো থানার সাগর ধর লেনের দোতলা বাড়িটিতে শোকের ছায়া। বাড়ির কর্তার মৃত্যু হয়েছে, আজ তাঁর শ্রাদ্ধ। বাড়ির সদস্যরা তারই জোগাড় করতে ব্যস্ত। এর আগে মৃত কর্তার দুই পুত্র পালন করেছেন অশৌচ। এদিন বেলা ১২টায় তিথিনক্ষত্র মিলিয়ে পুরোহিত সবে শ্রাদ্ধের কাজ শুরু করতে যাবেন; এমন সময় ঘটল বিপত্তি! বিপত্তি নাকি ভালো তা বিচার করবেন পাঠক! কারণ এমন ঘটনা আর ঘটেছে বলে জানা যায়না। উত্তর কলকাতায়, নিজের দোতলা বাড়িতে নিজেরই শ্রাদ্ধে উপস্থিত হলেন মৃত ব্যক্তি।
মৃত বলে প্রচার হওয়া ৬৫ বছরের দুলাল চন্দ্র দাস পাড়ায় বেশ পরিচিত ‘ন্যাদামামা’ নামে। তাঁর এই পরিচিতির কারণ, তিনি ছিলেন একটু খামখেয়ালি ও ক্ষ্যাপা স্বভাবের। নিজের শ্রাদ্ধ বাসরে ঢুকেও তিনি শ্রাদ্ধের জিনিসপত্র ছোঁড়াছুঁড়ি করেছিলেন। তাঁর ছেলেদের কাছে জানা যায় ১৭ই সেপ্টেম্বর বিশ্বকর্মা পুজোর ভোরে তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান, তাঁকে খুঁজে পাওয়া যায়না। পরে খবর আসে এন আর এস হাসপাতালের মর্গে ন্যাদামামার মৃতদেহ রয়েছে। সেই ব্যক্তির পোশাক, চেহারা অবিকল দুলাল চন্দ্রের মতই। দুলালের বাড়ির সদস্যরাও তাই বিশ্বাস করেন।
শুরু হয় অশৌচ পালন, মৃতদেহ পোড়ানোর ব্যবস্থাও হয়। ৬৫ বছরের দুলাল অ্যানিমিয়ার রোগি। ফলে বাইরে বেরিয়ে তাঁর অসুস্থতা আসতে পারে, মৃত্যুও হতেই পারে এমন ধারণা করেই কেটে গিয়েছিল কয়েকটা দিন।কিন্তু তার সবটা বদলে গেল শ্রাদ্ধের দিন। সশরীরে ফিরে এলেন দুলালবাবু। পুলিশের কাছে জানা যায়, যার মৃতদেহকে ‘বাবা’ ভেবে ছেলেরা পুড়িয়েছিল, তার বয়স ৩৫ মাত্র। কিন্তু তার পরিচয় জানা যায়নি, অজ্ঞাত পরিচয় মৃতদেহ বলেই তার পরিচিতি রয়ে গেছে।
ন্যাদামামার অন্তর্ধান নিয়ে প্রশ্ন করা হলে জানা যায় তিনি কালিঘাটের মন্দিরে ছিলেন। শ্রাদ্ধের দিন নাকি তিনি স্বপ্ন দেখেন তাঁর শ্রাদ্ধ হচ্ছে, তাই তড়িঘড়ি তিনি ফিরে এসেছেন বাড়িতে। তাঁর কথায়, “ভোরে দুবার স্বপ্ন দেখলাম আমার শ্রাদ্ধ হচ্ছে। বাড়ি ফেরার জন্য মন টানল। একটা ট্যাক্সিওয়ালাকে বললাম আমাকে বাড়ি নিয়ে চল ভাই।’’ বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন তিনি নাকি মনের দুঃখে বেরিয়েছিলেন। শ্রাদ্ধের ফলমূল নিয়ে রসিকতা করতেও দেখা যায় তাঁকে। গেয়ে ওঠেন গান।
Discussion about this post