উৎসবে মেতে থাকতে মানুষ সব সময়ে ভালোবাসে। চুঁচুড়াবাসীর তেমনই উৎসবের শেষ নেই। তেমনই জামাইষষ্ঠীতে চুঁচুড়ার ধরমপুরে চলে মহিষমর্দ্দিনীর পুজো। যা প্রায় ১৫০ বছরের পুরনো। এ পুজোর স্রষ্টা কে ছিলেন তা আজও অজানা। তবে জামাইষষ্ঠীকে বেছে নেওয়ার পেছনে রয়েছে একটি যুক্তিপূর্ণ কারণ। আগেকার দিনে মেয়ের বিয়ে হয়ে গেলে বাড়ির পথ মাড়ানো প্রায় ভুলেই যেতে হতো। তাই মায়ের সাথে বাড়ির মেয়েদের বাড়ি আসার এ এক সুযোগ বলা যেতে পারে।
পুজোর লোককথা হিসেবে একটি গল্প প্রচলিত আছে। বর্তমান শিল্পী তপন পালের ঠাকুরদা(নাম জানা যায়নি) সাক্ষী ছিলেন এক অদ্ভুত ঘটনার। একজন শাঁখারি ব্যবসার সময়ে রাস্তায় একজন অল্প বয়সী মেয়েকে দেখতে পান। যার সিঁথি ভরতি সিঁদুর কিন্তু হাত দুটো খালি। সেই মেয়ে তার কাছ থেকে শাঁখা পরে এবং প্রাপ্য চাইলে দেখিয়ে দেন তপন পালের বাড়ি। শাঁখারি সেই বাড়িতে গিয়ে প্রাপ্য চাইলে জানতে পারেন সে বাড়িতে তপন পালের ঠাকুরদার কোনো মেয়ে নেই। ঠাকুরদা বেরিয়ে পুকুর ধারে গেলে দেখতে পান ওই রূপের একটি মেয়ে হঠাৎ পুকুরে ঝাঁপ দেয়। উনি সেই থেকে বিশ্বাস করেন ওটাই মা মহিষমর্দ্দিনী।
আজ থেকে প্রায় ১২০ বছর আগে বলি প্রথা প্রচলিত ছিল এই পুজোয়। অষ্টমীর দিন চলতো মোষ এবং পাঁঠাবলি। তবে শোনা যায়, স্বপ্নাদেশে মায়ের নিষেধ আসে বলির জন্য। তা ছাড়াও পুজোর সময় শ্রী নরেন চ্যাটার্জি নামক জনৈক ব্রাহ্মণ জ্ঞান হারান। এ ঘটনাকেও মনে করা হয় দেবীর রুষ্টতার কারণ। সেই থেকে বলি প্রথা বন্ধ। তবে বলি বাদ দিয়ে বাকি ষষ্ঠী থেকে দশহারা অবধি পুজো চলে জমিয়ে।
পুরনো মন্দিরের আদল ক্রমে নতুন হয়ে উঠেছে। টিনের চাল থেকে দেবীর কৃপায় পাকা ছাদ আজ উৎসবের আশ্রয়। কালক্রমে প্রতিমারও পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমানে যে প্রতিমা রয়েছে ৫০ বছর আগে তা এমন ছিল না। মায়ের আগের রূপ ছিল খাস বাংলার। একেবারে সাবেকি। গায়ের রঙ ছিল হলুদ, মৃন্ময়ী রূপে মা বিরাজমান ছিলেন। বর্তমানে দেবীর হাত দু দিকে প্রসারিত। যাতে মনে হয় মা ধারণ করে আছেন সব। মন্দির হোক বা রূপ, পরিবর্তন হয়েছে ঠিকই। তবে এ পুজোর প্রতি মানুষের বিশ্বাস আজও একই ভাবে অটুট।
Discussion about this post