‘হ্যালো এটা কি ২৪৪১১৩৯ বেলা বোস তুমি পারছো কি শুনতে’ ১৯৯৪ থেকে ২০২০ বেলা বোসের কদর এক বিন্দুও কমেনি। সকালবেলা চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে রেডিওতে বেলা বোস হোক কিংবা খবরের কাগজে বা রাস্তার দেওয়ালে লেখা পোস্টারে তার হাস্যরসাত্মক উপস্থাপনাই হোক, বেলা বোস কে নিয়ে পাগলামি বাঙালির মনে আজও অটুট। কিন্তু, অঞ্জন দত্তর গানে বেলা বোসের নাম বা ওই ফোন নম্বর কোথা থেকে? এ নিয়েও চলছে নানান জল্পনা। চলুন আজ অঞ্জন দত্তর বেলা ও তার বিখ্যাত সেই টেলিফোন নাম্বার এর অতীতটা ঘেঁটে দেখা যাক।
১৯৯৪ সাল। তখনও ঘরে ঘরে সেভাবে টেলিফোন পৌঁছায়নি। আর স্মার্টফোন তো স্বপ্নাতীত। তখন পাড়ার মোড়ের দোকানে দেখা পাওয়া যেতো টেলিফোন বুথের। সেই টেলিফোনে আঙুল ঘুরিয়ে ডায়াল করতে হতো নম্বর। অনেক খাটুনি করে হাজার বার চেষ্টা করে তবে পাওয়া যেত ফোনের ওপারের মানুষের সাথে কথা বলার সুযোগ। এমনই এক সময় অঞ্জন দত্ত প্রকাশ্যে আনলেন তারে নতুন অ্যালবাম ‘শুনতে কি চাও’। আর সেই অ্যালবামেই মুক্তি পেল বিখ্যাত গান বেলা বোস। গানের ছন্দ মেলাতে তিনি ব্যবহার করলেন এই বিশেষ ৭ নম্বরের টেলিফোন নাম্বার ২৪৪১১৩৯। গান মুক্তির সাথে সাথেই তার জনপ্রিয়তা সকলকে ছাপিয়ে যেতে শুরু করল। সেই সময় কলকাতায় তখনও ৭ নম্বরের টেলিফোন নম্বর আসেনি। তখন টেলিফোন নম্বর হত ৬ নম্বরের। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যেই কলকাতায় চলে এলো ৭ নম্বর টেলিফোন নাম্বার। আর অদ্ভুতভাবে তখন বেলা বোসের ফোন নাম্বারের অস্তিত্বও পাওয়া গেল।
গানের বিখ্যাত নম্বর ২৪৪১১৩৯ ছিল তৎকালীন হিন্দি সংবাদপত্র ‘দৈনিক বিশ্বামিত্র‘র কার্যালয়ের। আবার অনেকে বলেন‚ নম্বরটি ছিল ওই পত্রিকারই তৎকালীন সম্পাদকের বাড়ির নম্বর। ব্যাস ফোন আসতে শুরু করল নম্বরে। বিভিন্ন মানুষ সারাদিনের বিভিন্ন সময় ফোন করে চাইতে থাকলেন বেলা বোসকে। একসময় তা এমন পর্যায়ে পৌঁছাল যে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে সংবাদপত্রের কতৃপক্ষ। এমন পরিস্থিতিতে, অঞ্জন দত্ত দুঃখপ্রকাশ করতে বাধ্য হন। তিনি বলেন‚ বেলা বোস বলে কাউকে তিনি চেনেনও না ওটা নিছকই একটি প্রতীকী নাম। আর এই গানের সাথে ছন্দ মেলানোর জন্যই ওই নম্বরের সৃষ্টি করেন তিনি। এছাড়া আর কোনো অন্য উদ্দেশ্য ছিল না। যদিও এই নম্বর মিলে যাওয়ার ব্যাপারটা নিছক কাকতালীয়। সত্যি কলকাতা মানুষ যে কি যাত্রায় সঙ্গীতপ্রেমী বা তার পাগলামি যে কি চূড়ান্ত তার প্রমাণ অঞ্জন দত্তের গান বেলা বোস এ। ২৬ বছর পেরিয়েও আজও একইভাবে জনপ্রিয় এই গানের কথা। আজও কলকাতার মানুষ খুঁজে বেড়ায় এই গানের পেছনে থাকা আসল রহস্যকে। কে বেলা বোস? নিছকই কি অঞ্জন দত্তের কল্পনা? নাকি লুকিয়ে আছে অন্য কোনও রহস্য? এই দ্বন্দ্বটা হয়তো চিরকালই থেকে যাবে একইভাবে।
Discussion about this post