“ও মা, ও মা, তোর কৃপা চাই, তোর কৃপা চাই…”এই গানের কথাগুলি মনে করিয়ে দেয় ভারতীয় জনগণের ঐতিহ্যবাহী মাতৃশক্তির প্রতি শ্রদ্ধা। বাংলার প্রতিটি কোণে একাধিক দেবী মন্দিরের অস্তিত্ব রয়েছে, তবে দিলাকাশ গ্রামের মা ভৈরবী তার প্রাচীনত্ব, আধ্যাত্মিক গুরুত্ব ও ইতিহাসের কারণে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই গ্রামটির অবস্থান তারকেশ্বর থেকে ২৪ কিলোমিটার দূরে, রোণ এবং দামোদরের সংযোগস্থলে। এটি একটি শান্তিপূর্ণ ও ঐতিহাসিক অঞ্চল হিসেবে পরিচিত।
মধ্যযুগে, এই স্থানটি ভূরশুট বা ভূরিশ্রেষ্ঠ পরগণার অন্তর্গত ছিল, যেখানে এক সময়ের তান্ত্রিক বাগদি যোদ্ধা দশবল চণ্ডডামর তার গুরু ভৈরবঘণ্টের সহায়তায় বিশাল ভূখণ্ড জয় করে রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। গুরুর আদেশে, তিনি এখানে মা ভৈরবীর একটি মন্দির নির্মাণ করেন। মা ভৈরবীর মন্দিরের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে এবং তাকে স্তুতি দিতে, স্থানীয় জনগণ দীর্ঘকাল ধরে এখানে পূজার্চনা করে আসছেন।

মা ভৈরবীর মূর্তি কাঠের তৈরি, যা বাংলার ইতিহাসের একটি বিরল রত্ন। এই ধরনের কাঠের মূর্তি বাংলার অনেক স্থানেই দেখা যায় না, ফলে এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। মূর্তিটি প্রাচীন এবং অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে নির্মিত, যা বাংলার সংস্কৃতি ও শিল্পের এক অসামান্য নিদর্শন। প্রতি বছর ফাল্গুন মাসের সংক্রান্তিতে এখানে মায়ের বিশেষ পুজো অনুষ্ঠিত হয়। এটি একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব, যেখানে স্থানীয়রা এবং দূর-দূরান্তের ভক্তরা আসেন মায়ের আশীর্বাদ লাভের জন্য। মন্দিরে আগত ভক্তরা বিভিন্ন ধরনের অঞ্জলি প্রদান করেন, বিশেষ করে পুষ্প এবং মিষ্টান্ন দিয়ে মায়ের পুজো করেন।

রেলপথে তারকেশ্বর এসে, সেখান থেকে সড়কপথে সহজেই পৌঁছানো যায় হুগলি জেলার এই প্রাচীন মাতৃমন্দিরে। পর্যটকদের জন্য এটি একটি অতি সহজলভ্য স্থান, যেখানে আধ্যাত্মিক শান্তির পাশাপাশি বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্যও অনুভব করা যায়। মন্দিরটির পরিচিতি শুধুমাত্র আধ্যাত্মিক নয়, এটি বাংলার ইতিহাস, সংস্কৃতি ও শিল্পের এক অমূল্য সম্পদ।
চিত্র ঋণ – সুরজিৎ দাস, উপাসক ব্যানার্জী
Discussion about this post