“একজন মাকে তার ছেলেমেয়ের পড়াশুনার জন্য অনেক পাঁপড় বেলতে হয়।” – কথাটা বড্ড শোনা শোনা লাগছে তাইনা? হ্যা তবে এই কথাটা কিন্তু বাস্তব ঘটনার উপর ভিত্তি করেই বলা। কারণ এই পাঁপড় বেলেই এদেশের অনেক মা তাদের ছেলেমেয়েদের পড়াশুনা শিখিয়েছে। নিজেদের সংসারে হাল ধরেছে ‘শ্রী মহিলা গৃহ উদ্যোগ লিজ্জত পাঁপড়’ নামক এক পাঁপড় প্রস্তুতকারী সমবায়ের হাত ধরে।
যে সমবায়ের পথ চলা শুরু হয়েছিল ১৯৫৯ সালের ১৫ মার্চ। দক্ষিণ মুম্বাইয়ের একটি বাড়ির ছাদ থেকে সাতজন গুজরাটি মহিলার (জাসবন্তীবেন জামনাদাস পোপাট, পার্বতীবেন রামদাস থোডানি, উজামবেন নারান্দাস কুন্ডালিয়া, বানুবেন এন. তান্না, লাগুবেন অমৃতলাল গোকানি, জয়াবেন ভি. বিথালানী ও চুতাড়বেন আমিশ গাওয়াড়ে) হাত ধরে। শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকলেও শুধুমাত্র রান্নার দক্ষতার উপরে নির্ভর করে, নিজেদের স্বনির্ভরশীল করতে এই প্রচেষ্টা ছিল তাদের। যে প্রচেষ্টা মাত্র ৮০ টাকা থেকে শুরু হয়ে আজ প্রায় হাজার কোটি টাকার ব্যবসায় পরিণত। আর ৪০০০০ এর বেশি মহিলাকে নিয়ে গঠিত। যাদের প্রত্যেকে আজ স্বনির্ভরশীল। আর সকলের কাছে ‘লিজ্জত সিস্টার’ নামে পরিচিত। যারা প্রত্যেকেই এই সমবায়ের মাধ্যমে পাঁপড় প্রস্তুতিকরণ প্রশিক্ষণে শিক্ষিত। এই পাঁপড় প্রস্তুতকারী সমবায় তাদের সুস্বাদু পাঁপড় আজ শুধু ভারতবর্ষের ১৭টা রাজ্যেই পৌঁছে থেমে থাকেনি। তারা ভারতবর্ষের পাশাপাশি আরও ২৫টি দেশে তাদের পাঁপড় পৌঁছে দিচ্ছে প্রতিনিয়ত।
এই সমবায়ের পাঁপড় প্রস্তুতির আরও একটি উল্লেখযোগ্য দিক হল। এ সমবায়ের পাঁপড় প্রস্তুতিকরণে কোনো যন্ত্র ব্যবহার করেননা। সম্পূর্ণ ‘লিজ্জত সিস্টার’ দের হাতে তৈরি। এছাড়াও এই পাঁপড় প্রস্তুতিকরণ হয় একটি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে। প্রত্যেকদিন নির্দিষ্ট সময়ে সমবায়ের গাড়িতে চেপে লিজ্জত সিস্টাররা পৌঁছায় তাদের নিকটবর্তী সমবায়ের শাখায়। যেখানে তাদের যেতে হয় মোট তিনটি কাউন্টারে। প্রথম কাউন্টারে তারা জমা করে বাড়িতে তৈরি তাদের আগের দিনের পাঁপড়। এবং সংগ্রহ করে একটি টোকেন। যা নিয়ে তারা পৌঁছে যায় দ্বিতীয় কাউন্টারে তাদের পারিশ্রমিক সংগ্রহ করতে। এবং সব শেষে তারা যায় তৃতীয় কাউন্টারে পাঁপড় বেলার আটা মাখা সংগ্রহ করতে। যেটা ওই সমবায় আগে থেকেই প্রস্তুত করে রাখে তাদের শাখাতেই। তাদের এমন করার কারণ তাদের প্রত্যেকটা পাঁপড় এর স্বাদ একই রাখার জন্য। এরপর লিজ্জত সিস্টাররা ফিরে যায় নিজেদের বাড়িতে। আর শুরু করে পাঁপড় এর প্রস্তুতি নিজেদের বাড়ির রান্না ঘরেই।
বর্তমানে এই সমবায় পাঁপড় ছাড়াও আরও বিভিন্ন প্রতিদিনের ব্যবহার করা জিনিসের আমদানি ও রপ্তানি শুরু করেছে। এবং পাশাপাশি আরো অনেক মায়েদেরকে স্বনির্ভরশীল করে তুলছে।
প্রতিবেদনে কুনাল বিশ্বাস
Discussion about this post