বর্ষায় বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন? কিন্তু যাবেন কোথায় নিশ্চয়ই এটা ভাবছেন। আপনি ঘুরে আসতে পারেন লাটপাঞ্চার থেকে। অনেকেই হয়তো এই জায়গাটির নাম শোনেননি। কিন্তু বলা বাহুল্য, এখানে গেলে আপনি সহজেই এই জায়গার সৌন্দর্য্যের প্রেমে পড়বেন। লেপচা ভাষায় ‘লাট’ কথার অর্থ বাঁশ, ‘পাঞ্চার’ কথার অর্থ জঙ্গল। শান্ত, নিরিবিলি প্রকৃতির মাঝে মহানন্দা অভয়ারণ্যের মাথার উপর অবস্থিত একটি ছোট পাহাড়ি গ্রাম লাটপাঞ্চার।
পাখিদের স্বর্গরাজ্য এই লাটপাঞ্চার। স্কারলেট মিনিভেট, এমারেল্ড ড্রোভ, রুফাস-নেকড হর্নবিল, ফ্যালকন, ক্রেস্টেড সারপেন্ট ঈগল, মাউন্টেন স্কপস আউল, ব্রডবিল, ব্ল্যাক বাজা ইত্যাদি সহ ২০০-র বেশি পাখির দেখা পাওয়া যায় এখানে। তবে এখানকার মূল আকর্ষণ হর্নবিল পাখি। এই পাখি দেখার জন্য বহু দূর দূর থেকে মানুষ ছুটে আসেন। রাতজাগা এই পাখির ডানা ঝাপটানোর শব্দ গোটা অঞ্চল জুড়ে শুনতে পাবেন। এখানকার জঙ্গলে আছে অনেক সিঙ্কোনা গাছ, যা থেকে তৈরি হয় ম্যালেরিয়ার ওষুধ কুইনাইন।
লাটপাঞ্চারের উপর থেকে দেখা যায় খরস্রোতা তিস্তার এঁকেবেঁকে বয়ে চলার অপূর্ব দৃশ্য। এই গ্রাম থেকে দু’কিলোমিটার দূরে রয়েছে সানসেরিদাঁরা ভিউ পয়েন্ট। আকাশ পরিষ্কার থাকলে এখান থেকে দেখা যায় তুষারাবৃত কাঞ্চনজঙ্ঘা। এখান থেকে আপনি ঘুরে আসতে পারেন নামথিং পোখরি লেক। এই লেকের পাশেই দেখতে পাবেন ফড়িং, গেছো ব্যাঙ। এছাড়াও আর একটি অতি বিশিষ্ট প্রাণীর দেখা মিলতে পারে ভাগ্যে থাকলে। ডাইনোসর যুগের বিলুপ্ত প্রায় অতি দুর্লভ প্রাণী স্যালামান্ডার। অবশ্যই ঘুরে আসবেন লেপচা মনাস্ট্রি থেকে। মনাস্ট্রি দেখে ফেরার পথে চা বাগানও ঘুরে দেখতে পারেন। পাহাড়ের কোলে থাকা চা বাগানের সৌন্দর্য্য আপনাকে মুগ্ধ করবেই।
এরপর হাতে সময় থাকলে ঘুরে আসতে পারেন সিটং থেকে। লাটপাঞ্চার থেকে ৭-৮ কিমি দূরে সিটং। সিটংয়ের অপর নাম ‘অরেঞ্জ ভিলেজ’। এখানে কমলালেবুর বাগান, ফুল, প্রজাপতি, পাখি এবং সুন্দর করে সাজানো ছোট ছোট বাড়ি দেখতে পাবেন। এবার আসা যাক আপনি লাটপাঞ্চার পৌঁছবেন কী করে? ট্রেনে করে আপনাকে আসতে হবে নিউ জলপাইগুড়ি বা শিলিগুড়ি। এরপর শিলিগুড়ি বা নিউ জলপাইগুড়ি থেকে গাড়িতে লাটপাঞ্চার যেতে দু’ঘন্টা মতো সময় লাগে। দূরত্ব কম বেশি ৪৮ কিলোমিটার। এখানে থাকার জন্য হোমস্টের ব্যবস্থা রয়েছে আপনি গিয়ে সেখানে থাকতে পারেন।
চিত্র ঋণ – চন্দ্রনাথ চ্যাটার্জি, দেবাশিষ গায়েন
Discussion about this post