চিঠি, যা একজনের পক্ষ থেকে অন্যজনের জন্য লিখিত তথ্যধারক বার্তা। তবে শুধুই যোগাযোগ নয়, স্বাক্ষরতার গুরুত্ব টিকিয়ে রাখার অন্যতম মাধ্যমও চিঠি। প্রযুক্তিবিহীন প্রাচীন যুগে ডাক পিওনের চিঠিই ছিল যোগাযোগের একমাত্র উপায়। ‘‘রানার ছুটেছে তাই ঝুম ঝুম ঘণ্টা বাজছে রাতে রানার চলেছে, খবরের বোঝা হাতে,রানার চলেছে রানার!’’- তবে প্রযুক্তির এই যুগে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতার সেই রানারের আর দেখা মেলে না। বর্তমান সময়ে এসএমএস, মেইল আর ফেসবুকে চ্যাটই প্রিয়জনের সঙ্গে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম। যার ফলে হারিয়ে যাচ্ছে চিঠির প্রচলন। তবে জাপানের শিল্পীর শিল্পকর্মের গুণে এই হারিয়ে যাওয়া এই চিঠিই যেন হয়ে উঠেছে পর্যটকদের অন্যতম গন্তব্য। জাপানের ফুজিনোতে পাহাড়ের গায়ে তৈরী বৃহত্তম প্রেম পত্র বর্তমানে জাপানের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র।
শুধুই ভ্যালেন্টাইন্স সপ্তাহ নয় সারাবছরই দেশ সহ পার্শ্ববর্তী দেশের বহু পর্যটক ফুজিনোতে ভিড় জমান এই অসামান্য শিল্পকর্মের টানে। টোকিও থেকে মাউন্ট ফুজির মধ্যবর্তী পার্বত্য অঞ্চলে অবস্থিত এই বিশাল আকারের প্রেমপত্রটি। বৃহৎ এই চিঠি ফুজিনো অঞ্চলের সবচেয়ে বিশিষ্ট শিল্পকর্ম। এটি তৈরী করেছিলেন জাপানের অন্যতম প্রসিদ্ধ শিল্পী মাসায়ুকি তাকাহাসি। শিল্পীর কথায়, তার শিল্পকর্মের মধ্যে সাধারণতা হল বড় আকার। অতি সম্প্রতি, তিনি একটি অর্ধ-ছবির ফ্রেম তৈরি করেছেন, যা ফুজিনোর শৈল্পিক জগতে প্রবেশপথের প্রতীক। মাসায়ুকির প্রতিটি শিল্পকর্মে মানবতা, প্রকৃতি, যত্ন, চেতনা এবং মহাবিশ্ব সম্পর্কে একটি বার্তা রয়েছে।
১৯৮৯ সালে তৈরী হয়েছিল এই বৃহত্তম স্থাপত্যটি। ১৭ মিটার লম্বা এবং ২৬ মিটার চওড়া এই প্রেমপত্রটি অবস্থিত ফুজিনোর একটি পাহাড়ের গায়ে। বৃহত্তম এই শিল্পকর্মটি ফুজিনো ট্রেন স্টেশন এবং চুও এক্সপ্রেসওয়ে থেকে স্পষ্টভাবে দেখা যায়। দূর থেকে দেখলে মনে হয় এ যেন পাহাড়ের প্রেম পত্র। আরও কাছ থেকে দেখলে বোঝা যায় দুটো হাত এটি ধরে রেখেছে। যুগ যুগ ধরে এভাবেই ওই লাভ লেটারটি ধরে আছে সেই পাহাড়। মাসা-সান বিশ্বাস করেন, পর্বতের ওপর এই শিল্প, আমাদের চারপাশের সামাজিক যত্নের প্রতিফলন।
বৃহত্তম শিল্পকর্মে ৫০ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন মাসায়ুকির কথায়, পাহাড়ে স্থাপনের আগে অংশগুলিকে ব্যাকগ্রাউন্ড সাপোর্ট স্ট্রাকচারের মাধ্যমে ফিট করে দেখা হয়। সেখানেই দূরত্ব সঠিক ও সঠিক ডিগ্রীর ধারণা করে তারপর পাহাড়ের গায়ে এটিকে স্থাপন করা হয়। তবে বেশ কয়েক বছর আগে উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বৃহত্তম এই প্রেমপত্র ভেঙ্গে পড়েছিল। এই ঘটনার পর ফুজিনোর সাধারণ মানুষেরা উদ্যোগী হন প্রাচীন এই শিল্পকর্মকে রক্ষা করতে। ভবিষ্যত সমাজের হাতে ভালবাসার এই শিল্পকর্মটি পৌছে দিতে বর্তমানে নিয়মিত এই প্রেমপত্রের মেরামতি করা হয়।
চিত্র ঋণ – https://dovetailmag.com/
Discussion about this post