বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের নাম নিশ্চয়ই অনেকেরই জানা? উত্তর অতলান্তিক সাগরের পশ্চিমে অবস্থিত এমন এক স্থান, যেখানে একবার গেলে খোঁজ মেলে না কোনও জাহাজেরই। এমনকি প্রায় ভোজবাজির মতোই উধাও হয়ে যায় জাহাজে থাকা মানুষগুলিও। কেন? সঠিক উত্তরের আশায় তার সন্ধান চলছে আজও। তবে বিশ্বের ইতিহাসে বারমুডার ত্রিভুজই একমেবাদ্বিতীয়ম নয়! আমাদের খুব কাছেই, ভারতের প্রায় পাশেই রয়েছে এক রহস্যময় হ্রদ, যেখানে যাওয়ার পথ থাকলেও নেই ফেরার পথের হদিশ। অর্থাৎ একবার সেই হ্রদের ধারে কাছে গেলে সেখান থেকে ফিরে আসেন না কেউই! ঠিক কি রহস্য লুকিয়ে সেই হ্রদে?
ভারত-মায়ানমার সীমান্তের এক ছোট্ট গ্রাম পাংসাউ। সেই গ্রামেই অবস্থিত ঘন জঙ্গলে ঘেরা, ‘দ্য লেক অফ নো রিটার্ন’। ওদিকে অবশ্য ভুলেও পা বাড়ান না গ্রামের কেউ। কারণ, একবার গেলে তাকে নাকি আর খুঁজেই পাওয়া যায় না। প্রায় এক শতাব্দী ধরেই রহস্যময় সেই হ্রদ ঘিরে কথিত রয়েছে নানা লোকগাথা। যার শুরু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে। সেইসময় যুদ্ধ চলাকালীন অবস্থায় এক মার্কিনি যুদ্ধ বিমান হ্রদের পাশে নামলেও, চালক এবং সেনা সহ বিমানটিকে আর খুঁজেই পাওয়া যায়নি। এরপর এক এক করে প্রায় ১২টি যুদ্ধ বিমান উধাও হয় হ্রদের আশপাশ থেকে। এমনকি হ্রদের ঠিক পাশেই অবস্থিত লেদো রোড দিয়ে যাওয়ার সময় পথ হারিয়ে একদল জাপানি সেনা এসে পড়ে হ্রদটির পাশে। তারপর থেকে তাদেরও কোনও সন্ধানই পাওয়া যায় না।
হ্রদটিকে ঘিরে তৈরি হয়েছে বিভিন্ন লোককথাও। হ্রদের কালো জলে না জানি কোন অভিশাপ লুকিয়ে! অন্ততঃ গ্রামবাসীদের মতে তো বটেই। পারতপক্ষে তারা অবশ্য এড়িয়েই চলেন হ্রদটিকে। তবে প্রয়োজনে এর ধারে কাছে যেতে হলে তার আগে বিশাল যজ্ঞ এবং পুজো সারেন তারা। তবে কাহিনীর শেষ হয়নি এখনও! হ্রদের ছবি যদি কেউ তুলতে যান তাহলেই শুরু হয় সমস্যা! কখনোই স্পষ্ট ছবি আসে না তার।
তবে বর্তমানে কিছুটা হলেও বদলেছে সময়। সবুজে ঘেরা হ্রদটির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে ইদানীং তার আশেপাশে ভীড় জমাচ্ছেন বহু পর্যটকই। জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত শীতকালীন উৎসবের সময় হ্রদে যাওয়ার ছাড়পত্রও মেলে গ্রামবাসী সহ পর্যটকদের। হ্রদটিকে ঘিরে তখন উৎসবে মাতেন সকলেই। তবে সবটাই হয় দিনের পরিস্কার আলোয়। চাঁদনি, আঁধার রাতে এখনও হ্রদের ধারে কাছেও পা রাখা নিষেধ এই গ্রামে। রাতের কালো আঁধারে তখন অন্য এক রূপেই নাকি জেগে ওঠে সে হ্রদ। তাই দিন ফুরিয়ে গেলে উৎসবে ক্ষান্ত দিয়ে সকল গ্রামবাসী যখন পাড়ি দেয় ঘুমের দেশে, তখন এক বুক রহস্য নিয়েই কালের অন্ধকারে তলিয়ে যায় ফেরার পথের হদিশহীন সেই হ্রদ। ঠিক কি রহস্য? তা অবশ্য আজও অজানা!
তথ্য ঋণ – “A profile of Changlang district: The place of interests”। National Informatics Centre, Changlang District Unit
Discussion about this post