“ক্লান্ত আমার মুখোশ শুধু ঝুলতে থাকে বিজ্ঞাপনে” শঙ্খ ঘোষের লেখা বিখ্যাত কবিতার বিখ্যাত দু’টি লাইন। বিগত প্রায় দুই বছরে সকলেই এই বিজ্ঞাপনের থুড়ি মাস্কের বোঝা যে কতখানি ভারী তা টের পেয়েছি। সকলেই আমরা তাই দিন গুণে চলেছি এই মাস্ককে চির বিদায় দেওয়ার অপেক্ষার। খুলে প্রশ্বাস নেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টায় সারা পৃথিবীর মানুষ ভুগছে। এমন সময় জানা গেল ফতেমা গাজেডি নামে এক মহিলার কথা যিনি কিনা বিগত প্রায় বছর ধরে নিজের মুখোশ খুলতে পারেন নি। তবে এটি আবার যে সে মুখোশ নয় একেবারে মহাকাশচারীর মতো সম্পূর্ণ মুখ ঢাকা মুখোশ।
মরোক্কোরবাসী ফতেমা গাজেডির জীবন অনেকটাই যাকে বলে ট্রাজেডির মতো। গোটা পৃথিবী যখন মাস্কের বোঝা বইতে বইতে এক প্রকার অধৈর্য সেখানে ফতেমা আজ ২০ বছর ধরে বয়ে চলেছে মহাকাশচারীর হেলমেটের ভার। তবে ফতেমা নিরুপায়। কারণ সে এক প্রকার বিরল চর্ম রোগে আক্রান্ত। এই রোগের নাম “জিরোডার্মা পাইগামেন্টোসাম”। বিরল এবং অত্যন্ত ক্ষতিকারক এই রোগের মূল কাজ শরীর পুড়ে যাওয়া কোষগুলিকে আর তৈরি হতে না দেওয়া। অর্থাৎ রোদে বেরানোর ফলে আমাদের শরীরে যেটুকু চামড়া পোড়ে তা আবার শরীরের কোষগুলি নিজের থেকেই পূরণ করে। কিন্তু ফতেমার মরে যাওয়া কোষগুলি নতুন করে সৃষ্টি হয় না। মাত্র তেরো বছর বয়েসে ফতেমার এই রোগ ধরা পড়ে। তারপর থেকে এখনো অবধি সে মুখোশ ঢাকা শরীর নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
সত্যি আমরা সকলে হাঁপিয়ে উঠেছি আর মাস্কের বেড়াজাল কাটাবার জন্য লড়াই করছি প্রতিদিন। ফতেমার লড়াই সেখানে সারাজীবনের। আজ না হোক হয় তো আশা রাখা যাক কোনোদিন পৃথিবী আগের মতো শান্ত হয়ে উঠবে। মুখোশ খুলে সকলে মিলে বলতে পারবে কথা। কিন্তু এই মেয়েটিকে জীবনের সাথে এই যুদ্ধ চালিয়ে যেতেই হবে। তাঁর এভাবেই লড়াই চলুক এবং সুস্থ থাকুক ফতেমা!
Discussion about this post