জন্মদিনে জীবনদান! ব্যাপারটা খোলসা করেই বলা যাক। কোন্ননগরের তরুণী আত্রেয়ী ভৌমিক, গত ২৬ ডিসেম্বর ৩০ বছরে পা রাখলেন। বিষয়টি অতি প্রাকৃত কিছু নয়। তবে সাধারণের ভিড়েও এই জন্মদিন নিজেকে আলাদা করে নেয় আপনা থেকেই। জন্মদিন উপলক্ষ্যে আত্রেয়ী শ্রীরামপুরের শ্রমজীবী হাসপাতালে ছুটে এলেন রক্তদানের উদ্দেশ্যে। কোনোরকম স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, ক্লাব বা সংগঠনের ছত্রছায়ায় নয়। বরং সম্পূর্ণভাবে ব্যক্তিগত উদ্যোগে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডেইলি নিউজ রিলকে জানান, আত্রেয়ী এর পূর্বেও হাসপাতালে রক্তদানের উদ্দেশ্যে এসেছেন বহুবার। এই বিষয়ে বরাবরই তার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। তবে প্রত্যেক ব্যক্তি জীবনে জন্মদিন বরাবরই একটি বিশেষ দিন। শুভ কাজে এর চেয়ে শুভ সময় আর আছে কি? হিসেবে সাধারণ মানুষের উদ্যোগে তৈরি এই হাসপাতালের তরফে জন্মদিনের উপহার হিসেবে দুটি বই তুলে দেওয়া হয় আত্রেয়ীর হাতে। তবে আত্রেয়ী একা নন,তার সঙ্গে এসেছিলেন তার বন্ধুরাও। হাসপাতালের সহ সম্পাদক গৌতম সরকার তরুণীর এহেন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তাঁর মতে, রক্তদানকে ঘিরে একসময় সাধারণের মাঝে যে ধরনের ট্যাবু প্রচলিত ছিল, ধীরে ধীরে সেসব কমে আসছে। বর্তমান তরুণ প্রজন্মের ভূমিকাই সেখানে সর্বাধিক। ‘রক্তদান’ নিষিদ্ধতার বেড়াজাল কাটিয়ে সাধারণের কাছে এখন গ্রহণযোগ্য।
আত্রেয়ীর মতো মানুষের উদ্যোগেই পাল্টে যাচ্ছে সমাজ চিত্র। এখন মানুষ যথেষ্ট সচেতন। রক্তশূন্য ব্লাড ব্যাংকগুলো থেকে যখন ফিরে যেতে হয় রোগীর পরিবারকে, পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় মুহূর্তের সাক্ষী বুঝি তারাই। তাই রক্তদানের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে মানুষের মনে একটি স্বচ্ছ ধারণা তৈরী হয়েছে। তবে বাস্তবে, রক্তদানে এগিয়ে আসে গুটিকয়েক মানুষই। ভারতে মাত্র ১% মানুষই যুক্ত রক্তদানের সঙ্গে! সেখানে আত্রেয়ীর এই ধরনের উদ্যোগ বাকিদের অনুপ্রাণিত করবে স্বাভাবিকভাবেই। সরকারী,বেসরকারী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তো আছেই। তবে ব্যক্তি উদ্যোগ সেখানে সবসময়ই এগিয়ে। এইসব টুকরো ঘটনাতেই বদলে যায় রোজকার বাস্তব চিত্র! তাই রক্তদানে পিছপা নয় বরং এগিয়ে আসুক সকলে। আত্রেয়ীর মতো মানুষেরাই আদতে পৃথিবী পাল্টানোর ক্ষমতা রাখে খুব সাধারণের ভিড়েও!
Discussion about this post