মানুষ ইচ্ছে পূরণ করে সবাই জানে। তবে আদতে ইচ্ছে শক্তি বাঁচিয়ে রাখে মানুষকে। তারই জ্বলন্ত উদাহরণ হল হাসান পারভেজ। তিনি একাধারে ‘আন্ধারমানিক’ এর সম্পাদক, লেখক, প্রকাশক এবং হকার। আর এছাড়াও তার একটি পেশা আছে। পেশায় দিনমজুর হাসান পারভেজ। ছোটোবেলা থেকেই ছিল তার লেখার প্রতি ঝোঁক। তবে দারিদ্র্যতার বেড়া কাটিয়ে বেরোতে পারেননি তিনি।
১৯৯৬ সালে টাকার অভাবে পরীক্ষা দিতে না পারলেও ২০ বছর পর ২০১৫ সালে সে পরীক্ষা দেন হাসান। শত দুর্দশা থাকলেও হাসানের কবিসত্ত্বা হারিয়ে যায়নি। বিভিন্ন জায়গায় লেখা পাঠালেও, উত্তর মেলেনি তার। এরপরই এক সাংবাদিকের সাথে আলাপ হাসানের। তাকে গুরু বলে মেনে, শুরু করেন এক নতুন যাত্রা। আন্ধারমানিককে সাথে নিয়ে শুরু হয় পথ চলা। রোজকার খুন, ডাকাতি ইত্যাদি ছেড়ে এ পত্রিকায় উঠে আসে জীবনের কথা। নতুন করে বাঁচার কথা, নতুন আশার কথা। রুবিনা বলে এক মেয়েকে নিয়ে জসিমউদ্দিনের ‘আসমানী’ কবিতার অনুকরণে কবিতা লেখেন তিনি। যে কবিতায় উঠে আসে রুবিনার কষ্টকর জীবনযাত্রার কথা। এ কবিতা থেকে রুবিনার কথা প্রচার হলে সরকার থেকে এক খন্ড জমি এবং বাড়ি পায় রুবিনা আর তার অভিভাবক। নইলে হয়তো আবারও তাকে পড়ার দিন বাদে দাঁড়াতে হতো ভিক্ষার বাটি হাতে।
এ পত্রিকা বিক্রি হয় ১০ টাকা করে। হাসান নিজেই সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। পাশের গ্রামের কোন মহিলা ব্যবসা করছেন বা কোন মহিলা মুরগি পেয়ে কি করে তা থেকে স্বাবলম্বী হলেন তার গল্প উঠে আসে এতে। আর এই গোটা পত্রিকাটি হাতে লেখা। কাজের সময়েও পত্রিকার কাজ করতে থাকেন হাসান। আজ ‘আন্ধারমানিক’ শুধু একটা পত্রিকা নয়, বহু মানুষের অনুপ্রেরণা। আর হাসান পারভেজের মত মানুষেরা প্রমাণ করে দেয়, ইচ্ছে থাকলে সব সম্ভব।
চিত্র ঋণ – দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড বাংলা
Discussion about this post