কথায় বলে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। আর এই হুজুগে বাঙালির শুধু দুগ্গা মাকে দেখে মন ভরে না। প্রতিবছর তাই তাদের মন ডুব দেয় মা কালী বলে। পুজো-পাব্বনের দিনে বাঙালির হৃদয়ে আনন্দের ছোঁয়া আসে মৃৎ শিল্পীদের হাত ধরে। তিলোত্তমার পটুয়াপাড়ায় মৃৎ শিল্পীরা তাই প্রতি বছর উদয়াস্ত পরিশ্রম করে প্রতিমা গড়েন। মা লক্ষ্মীর বাড়ি ফিরে যাওয়া আর মা কালীর প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে একই দিনে। তবে কিছু প্রতিমা আবার বৈশাখ মাসেও তৈরি করে রেখেছেন মৃৎ শিল্পীরা। দুর্গা পুজো, লক্ষ্মীপুজো পেরিয়ে এই সময় কুমোরটুলি ঘোরার বাড়তি সুবিধা ট্যুরিস্ট-ফটোগ্রাফাদের ভিড় নেই। অথচ সেই আমেজ, মাটির গন্ধ, সেই তাড়াহুড়ো সবটুকু ষোলো আনাই বর্তমান।
এখন কালী পুজো প্রায় বাড়ির উঠোনে এসে হাজির। নাওয়া খাওয়া ভুলে গিয়ে কাজ করে চলেছেন তারা। কথা বলার মতো সময় নেই তাদের। এখন কাজ কেবল খড় বাঁধা, মাটি লেপা আর রং করা। কিছু প্রতিমাতে মাটি দিয়ে তৈরি মায়ের জিভ জোড়ার কাজ করছেন তারা। আবার কিছু প্রতিমার কাজ প্রায় শেষের দিকে। শুধু রংটুকুই বাকি। ছোট থেকে বড় সব আকারের প্রতিমা রয়েছে পটুয়াপাড়ার গলিতে। আর দাম রেখেছেন দেড় হাজার থেকে শুরু করে দেড় লাখ পর্যন্ত। পটুয়া পাড়ার গলিতে বহু বিদেশির ভিড় চোখে পড়ছে। এরই মধ্যে, ব্যস্ততার মাঝেও একজন মৃৎ শিল্পী কিছু কথা বললেন। নাম আকাশ পাল। তিনি বললেন, “শুধু পটুয়া পাড়ায় নয়, বনহুগলীর দিকে চল্লিশ ফুটের বড় মা কালীর প্রতিমা তৈরি হচ্ছে তার হাত ধরেই। তবে সেই প্রতিমা তৈরি হচ্ছে সেখানকার মন্ডপেই।”
আমরা যারা প্রতিমা দর্শক, তাদের চোখে শুধু ওই মাটির তালটুকুই চোখে পড়ে। কিন্তু মৃৎশিল্পীদের কাছে ওই মাটির তালই একমাত্র সম্বল। মাটির তালের মধ্যেই মা’কে দেখতে পান তারা। তাদের তুলির টানেই সেজে ওঠে শত শত কালী প্রতিমা। কলকাতায় ইতিমধ্যেই আত্মপ্রকাশ করেছে মুচিবাজার, উল্টোডাঙা, শ্যামবাজারের মতো বেশ কিছু মিনি কুমোরটুলি। তাই এখানকার ছোট খদ্দেরের সংখ্যা গিয়েছে কমে। উপরন্তু লক্ষ্মীপুজোর পর কালীপ্রতিমা তৈরির জন্য খুব স্বল্প সময়ই মেলে। তারপরেও যুদ্ধকালীন তৎপরতায় পটুয়াপাড়ার মৃৎ শিল্পীরা ‘মাটির মানুষ’ হয়ে গড়ে তুলছেন দীপান্বিতাকে।
Discussion about this post