জীবজগতের সবচেয়ে উন্নত প্রাণী আমরা, মানুষ। অথচ মানবসভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে কোনো অজ্ঞাত কারণে যেন মানুষের ‘অনুন্নত’ প্রবণতাগুলিই প্রকটতর হয়ে উঠছে! একের পর এক বিকৃত রুচির অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ছে উন্নততম এই প্রজাতি। আবারও তেমনই এক ঘৃণ্য অপরাধের সাক্ষী হল শহর কলকাতা। পথকুকুরকে নিজের বাড়িতে এনে তাকে ধর্ষণ করলেন এক ব্যক্তি!
ঘটনাটি ঘটে চলতি মাসের ১৯ তারিখ। অভিযুক্ত চারু মার্কেট থানার পাশে ৪ নং দেশপ্রাণ শাসমল রোডের বাসিন্দা, সুকুমার দাস। অভিযোগ, দু’বছর বয়সী এক গর্ভবতী পথ কুকুরকে নিজের বাড়িতে এনে ধর্ষণ করেছেন তিনি! প্রতিবেশীদের বক্তব্য অনুযায়ী একবার নয়, এমন বিকৃত ঘটনা অভিযুক্ত ঘটিয়েছেন আগেও। তবে এবারে পাড়ার লোকেরাই ভিডিও করে সেটি ছড়িয়ে দেন। সেই ভিডিও এসে পৌঁছয় জনৈক পশুপ্রেমী ও স্বেচ্ছাসেবক সন্দীপন মুখার্জীর কাছে। বিন্দুমাত্র দেরী না করে কুকুরটিকে উদ্ধার করতে ও দোষীকে উপযুক্ত শাস্তি দিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি।
আরও পড়ুন ক্লাবের মিটিং থেকে পাড়ার সুখদুঃখে পাশে থাকা জ্যাক নিঃশব্দে বিদায় নিল!
প্রথমে দিল্লির ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান অ্যানিম্যাল প্রোটেকশন অর্গ্যানাইজেশন (FIAPO)-র সহযোগিতায় কলকাতা অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন-এর তরফে সন্দীপনবাবু চারু মার্কেট থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। সাথে সাথেই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারপর উদ্ধার হওয়া কুকুরটিকে একটি শেল্টারে পাঠান তিনি। ‘ডেইলি নিউজ রিল’-এর সঙ্গে কথোপকথনে নিজের ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন সন্দীপনবাবু। তাঁর কথায়, “বেহালাতেও কিছুদিন আগে একইরকম একটি ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু এই ঘটনা তো আরও ভয়াবহ! এই ধরণের বিকৃত মানসিকতা যাদের, তাদের আমি অন্ততঃ মানুষ বলে মনে করি না।”
আরও পড়ুন বন্য প্রাণীর রক্তে মাখা এক খুনি রেল লাইনের গল্প, যার পরতে পরতে লেগে রক্তের দাগ!
অভিযুক্তকে শাস্তি দিতে পুলিশের তৎপরতা দেখেও সন্তুষ্ট তিনি। পশু-নির্যাতনের ক্ষেত্রে অনেকেই পাশে থাকার গালভরা প্রতিশ্রুতি দিলেও, অনেক সময়ই নামজাদা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির তরফে তেমন সাহায্য পাওয়া যায় না। সেক্ষেত্রে দিল্লির FIAPO-র সাহায্যেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া এতটা সহজ হয়েছে, এমনই মত সন্দীপনবাবুর। অন্যদিকে এই ঘটনাকে তীব্র ধিক্কার জানিয়েছেন রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তথা পশুপ্রেমী সংস্থা উত্তর দিনাজপুর পিপল ফর এনিম্যালসের সদস্য ড। তাপস পাল। তবে প্রশাসন ও সন্দীপনবাবুদের মত শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষরা যতই তৎপর হোক না কেন, মানুষের বিকৃত মনের সুস্থতা ছাড়া এই অভিশাপ থেকে মুক্তির কোনো পথই হয়তো নেই!
Discussion about this post