তিনশো বছরের পুরনো কলকাতার গল্পও ততোধিক বৈচিত্রময়। তেমনই এক জায়গা পার্ক সার্কাস সংলগ্ন বেক বাগান। কলকাতার জন্মলগ্নের কিছুটা পরে হাত ধরাধরি করে বেড়ে উঠেছে এই জায়গা। হিন্দু, মুসলমান, খ্রিষ্টান ধর্ম নির্বিশেষে শহরবাসীর ঠিকানা থেকেছে এই অঞ্চল। সময়ের নিয়মে বহু প্রতিবেশী আজ শহর ছাড়া। তবু রয়ে যাওয়া ইমাদ, সুবীর আর প্রিন্সরা আজও আছে একইরকম।
তারিখ মেনে এখানকার পথে স্বচ্ছন্দে নেমে আসে ঈদ, বড়দিন আর দুর্গাপুজোর মতো উৎসব। এবারের ঈদের মেরে কেটে বাকি কয়েক ঘন্টা। ধর্ম বর্ণ উপেক্ষা করে তারই মরসুমী আনন্দে মেতেছে স্থানীয়রা। দুপুরের পর থেকে বাজার সংলগ্ন রাস্তার দুপাশ ছন্দ মিলিয়ে সেজে উঠেছে বিভিন্ন অস্থায়ী হাতগাড়ির স্টলে। সেখানে থরে থরে সাজানো বাহারি পোশাক, জুতো, ব্যাগ, চুড়ি, কার্পেট, আতর আরও কত কী! শুধুমাত্র এই দিনগুলোতেই দেখা মেলে এদের। রমজানের পবিত্র মাসে পসরা সমেত হাজির হয়েছে দোকানিরা। প্রতিদিন প্রায় রাত ভোর করে চলছে আনন্দের ভাগ বাটোয়ারা। থাকছে ঠান্ডা সরবতের হাতগাড়িও। বিকেলের আলোর তেজ কমলে দেখা মিলছে ফল, বাদাম, সেমুই, ঘুগনি পরোটা, মাংসের কাবাব, কোর্মা, ধোঁয়া ওঠা হালিমের হাড়ি, মাংসের বিরিয়ানির। খাবারের ঘ্রাণ গলি ছাড়িয়ে পৌঁছে যাচ্ছে বড় রাস্তায়।
আরও একটু সময় কাটলে কিছু মানুষ গায়ে নতুন জামার দ্যুতি নিয়ে ভিড় জমাচ্ছে স্থানীয় একটি মসজিদে। বৈকালিক নামাজের সুর তখন ছুঁয়ে ফেলে মহানগরীকে। সম্বিত ফেরে সামনে হাত বাড়ানো এক বৃদ্ধ ভিক্ষুকের ডাকে। আল্লার উপর পরম বিশ্বাসে শান্ত তাঁর মুখ। এভাবেই দমিনিক লাপিয়েরের সিটি অফ জয় মুখরিত হয়ে উঠেছে গ্রীষ্মে, শীতে, শরতে, উৎসবে-বিনা উৎসবে।
Discussion about this post