জটায়ুর ভাষায় – ‘হাইলি সাসপিসিআস’। কিন্তু ব্যপারটা একেবারেই গল্প নয়। একশো শতাংশ সত্যি। আর এর যিনি গবেষক তিনি তো এই আবিষ্কারের জন্য ‘আইজি নোবেল’ পুরষ্কার ও পেয়েছেন। হ্যাঁ মশাই, চিকিৎসা ছাড়াও কিডনি স্টোন নিরাময় করা সম্ভব। কীভাবে? সেই বিষয়েই আজকের এই প্রতিবেদন। কিডনি স্টোন হলো মূলতঃ কিডনি থেকেই উৎপন্ন বিভিন্ন মিনারেলের কঠিন অবস্থা। এটি ছোট্ট বালি কণা থেকে শুরু করে গল্ফ বলের মতো বিভিন্ন আকারের হয়। সব সময় যে অস্ত্রোপচার দ্বারাই এটার নিরাময় হয় তা নয়। এর আকার অনুযায়ী চিকিৎসকেরা অনেক সময় ওষুধ দিয়েও এর নিরাময় করে দেন। যাই হোক, বরং আসল বিষয়ে আসা যাক।
মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষক চিকিৎসক ডেভিড ওয়ারটিঙ্গের কাছে কিডনিতে স্টোনের চিকিৎসাধীন এক রোগী হঠাৎই বলেন এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতার কথা। একটি অ্যামিউজমেন্ট পার্কে ‘বিগ থান্ডার মাউন্টেন রাইড’ চড়ছিলেন তখন আচমকাই লক্ষ্য করেন যে তাঁর কিডনিতে থাকা স্টোনের একটি বেরিয়ে আসে। প্রথমটায় বিশ্বাসযোগ্য না হওয়ায় তিনি আবার চড়েন। ফল সেই একই, আবারও একটি স্টোন বেরিয়ে আসে। এভাবে তিনি যতবার চড়েন ততবারই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। স্বভাবতই ডেভিড ওয়ারটিঙ্গার এটা বিশ্বাস করেন নি। কিন্তু খানিক কৌতূহল বশতঃ তিনি একটা রেনাল সিস্টেম মডেল তৈরি করেন। মানে কৃত্রিম কিডনি, আর সেই কিডনিতে স্টোনও রাখেন। সেটা নিয়ে তিনি ওই ‘ বিগ থান্ডার মাউন্টেন রাইড’ চড়েন।
তিনি যে ফল হাতেনাতে পেলেন সেটা তিনি নিজের চক্ষে বিশ্বাস করতে পারলেন না। এরকম ভাবে তিনি প্রায় ২০বার রাইডটি চড়েন। প্রতিবারের ফল একটাই। অত্যন্ত বিস্মিত হয়ে তিনি ফিরে এলেন তাঁর গবেষণাগারে। তিনি আরো এরকম অনেক মডেল বানান যার মধ্যে ছোট(৪.৫ কিউবিক মিলিমিটার), মাঝারি(১৩.৫ কিউবিক মিলিমিটার), বড় ( ৬৪.৭কিউবিক মিলিমিটার) আকারের স্টোন রাখেন। এবার তিনি শুধু ওই একটি বিশেষ রাইড নয়, ওই জাতীয় একইরকম নানা রাইড চড়েন। যেখানে তিনি একই ফল পান। কিন্তু ওই বিগ থান্ডার মাউন্টেন রাইডে এর ফলটা অনেক বেশি। সমস্ত পর্যালোচনা করে তিনি এর যে কারণ বলেন সেটা হলো ওই বিশেষ রাইডের উচ্চতা আর রাইডটি চড়াকালীন শরীরের নানাবিধ মুভমেন্ট। আর তাঁর এই আবিষ্কার সারা বিশ্বে সাড়া ফেলে দেয়। এই রকম নানা উদ্ভট আবিষ্কারের জন্যই ১৯১১ সাল থেকে আবিষ্কারক কে ‘আইজি নোবেল’ সম্মানে ভূষিত করা হয়। স্যার ডেভিড ওয়ারটিঙ্গারকেও এই সম্মানে সম্মানিত করা হয়। আর এই আবিষ্কারের নাম দেওয়া হয় ‘বিগ মাউন্টেন রাইড’। তাই যদি অপারেশনে ভয় পান তাহলে একটু খরচ হবে ঠিকই কিন্তু একবার চট করে ঘুরেই আসুন ‘ডিজনি ওয়ার্ল্ড’। না অপারেশন, না ওষুধের ঝঞ্ঝাট; একধাক্কায় অসুখের নিরাময়।
Discussion about this post