প্রকৃতির সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধতে চান? কিংবা লালমাটির পথে খুঁজে পেতে চান এক টুকরো স্নেহের পরশ? তবে আর দেরি নয়, ঝটপট প্যাকিং সেরে রওনা দিন ঝাড়গ্রামের রূপকথার রাজ্যে। দেখতে স্বপ্নের মতো হলেও ব্যপারটা কিন্তু নিখাদ সত্যি। ঝাড়গ্রাম ব্লকের রাধানগর পঞ্চায়েতের অধীন এই গ্রাম লালাবাজার। তবে ‘খোয়াব গাঁ’ নামেই বিশেষ পরিচিতি এর। কিন্তু হঠাৎ করে একটি গ্রাম স্বপ্নপুরী হয়ে ওঠার কারণ কি? কেইবা তাকে সাজালো এমনভাবে? ওখানে পা রাখার আগে এক ঝলক জেনেই নিন খোয়াব গাঁয়ের তথ্যসামগ্রী।
মাটিলেপা দেওয়াল, খড় টালির ছাউনি। তারমধ্যেই হাসি খেলায় বাস করে লোধা শবরদের ১৩টি পরিবার। মাছ ধরে আর কাজুবাদাম সংগ্রহ করে চলে ওদের পেট। পুলিশ লাইনের মেন রোড থেকে সরু মেটে রাস্তা চলে গছে জঙ্গলের মধ্য দিয়ে। সেই পথে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শালপাতার খসখসানি শুনতে শুনতে পৌঁছে যাবেন খোয়াব গাঁ। চালচিত্র অ্যাকাডেমির প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক চিত্রশিল্পী মৃণাল মণ্ডল অঞ্চলটিকে একেবারে তাঁর কর্মক্ষেত্র করে ফেলছেন। তাঁর সহযোগী শিল্পীদের নিয়ে এই গ্রামেই গড়ে তোলেন ‘ওপেন স্টুডিয়ো’। গ্রামের কচিকাঁচাদের হাতে ধরে শিখিয়ে চলেন আঁকার নানা কৌশল। আর তাদের দক্ষতাতেই গ্রামটির প্রতি দেওয়াল এখন যেন ফাঁকা ক্যানভাস। দেওয়ালগুলো সেজে উঠেছে পুরাণ রূপকথার নানা গল্পচিত্রে। বাঁশ-কাঠের তৈরি ময়ূর, গণেশের মুখ, কাঁকড়া বিছের পসরা শিশুরাই বানায়।
তবে শুধুই আঁকাঝোকা নয়, মৃণালবাবু ও তাঁর সাথীরা এখানের মানুষগুলোকে পরিবেশ সচেতন করে তুলেছেন। প্রতি রোববার এখানে চলে গাছ পোঁতা। আগের মতো গাছকাটা এখন প্রায় নেই বললেই চলে। যে শিক্ষার আলো এতকাল ওরা পায়নি চালচিত্র অ্যাকাডেমির উৎসাহে তা সফল হয়েছে। মৃণালবাবু ওই ছোট্ট গাঁয়ের ছেলেপুলেদের কুটিরশিল্পের মাধ্যমেই তিলেতিলে স্বনির্ভর করে তুলছেন। তবে খোয়াব গাঁ লোকপরিচিতি না পেলেই হয়ত ভালো হত। পর্যটকদের ভিড়ে গাঁয়ের অর্থনৈতিক মন্দা সরলেও পরিবেশ ভীষনভাবেই হচ্ছে নষ্ট। যে স্বপ্নের সবুজে পরিপাটি করা শিল্প ছিল সেখানে এখন ভিড়েছে ছেঁড়া পলিথিন প্যাকেট। পরিবেশের মলিনতাটাকে বেমালুম এড়িয়ে যাচ্ছেন এই পর্যটকরা। তাই একটুখানি সচেতনতা নিয়ে একঘেঁয়েমি কাটাতে এবার বেরিয়ে পড়ুন খোয়াব গাঁয়ের আঁকেবাঁকে।
তথ্য এবং চিত্র ঋণ – প্রতিম বেরা
Discussion about this post