মর্ত্যে এখন খুশির মরশুম। এক মা ফিরে গিয়েছেন তাঁর শ্বশুরবাড়ি সেই বিষাদ কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আরেক মায়ের আগমনের উল্লাস শুরু চারিদিকে। “মায়ের মূর্তি গড়াতে চাই, মনের ভ্রমে মাটি দিয়ে”, কবি রামপ্রসাদের বিখ্যাত একটি গানের লাইন। মা কালীকে বিভিন্ন রকম বিশ্বাসের সাথে মানুষ পুজো করে থাকেন সারা বছর জুড়ে। মূর্তির প্রকার আকার এক এক জায়গায় এক এক রকমের। তারই মধ্যে অন্যতম হলো প্রশ্চিম মেদিনীপুরের ক্ষীরপাই এর বড়ো মায়ের মূর্তি। আর এই মন্দিরেই অভিনব পদ্ধতিতে পুজিত হন এখানের বড় মা।
কথায় আছে “বিশ্বাসে মিলায় বস্তু”, আর এই বিশ্বাস নিয়েই পুরোহিত ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে পুজো হয়ে আসছে ক্ষীরপাইয়ের বড়ো মায়ের মন্দিরে। আজ্ঞে! হ্যাঁ কেবল মাত্র বিশেষ দিন ছাড়া কোনও পুরোহিত দ্বারা পুজো হয় না এই মন্দিরে। কিন্তু দূর দূরান্ত থেকে ভক্তের সমাগম হয় সারা বছর জুড়ে। ভক্তেরা নিজেরাই নিজের মতো করে মায়ের পুজো করেন। দীর্ঘ প্রায় ষোলো বছর এইভাবেই পুজো হয়ে আসছে বড়ো মায়ের মন্দিরে। এমনকি মন্দিরের আসে পাশে এমন কোনও দোকান নেই যেখান থেকে ভক্তরা ধূপ ইত্যাদি কিনে পুজো দিতে পারেন। মন্দিরে ঢোকার মুখেই রয়েছে প্রণামী বক্সের একটি বাক্স। সেই ব্যাক্সের উপরে রাখা ধূপের প্যাকেট সেখানে দশ টাকা রেখে, নিয়ে নেওয়া যায় এক খানা ধূপের প্যাকেট। এর পর ভক্তি ভরে নিজের মতো ভক্তরা মন্দিরে ঢুকে মায়ের আরাধনা করতে পারেন।
মন্দিরে আরেকটি বিশেষ দ্রষ্টব্যের কথা না বললেই নয়! এই মন্দিরে প্রণামী দেওয়ার ব্যবস্থা তেমন নেই, এমনকি পুজোর জন্য আনা ভক্তদের মিষ্টি, ফল ইত্যাদির কিছুটা মাত্র মা’কে নিবেদন করা যায়। বাকি ফল মিষ্টি ইত্যাদি ভক্তরা, বাকি ভক্তদের মধ্যে বিলিয়ে দিতে পারেন। দীপাবলির সময় ভীষণ বড়ো করে পুজো হয় এবং রাজ্যের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায় হাজার হাজার ভক্তরা আসেন মায়ের দর্শনে। উচ্চতায় প্রায় দোতলা বাড়ির সমান মা কালীর এই মূর্তি। মন্দিরে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে, ঠেলাঠেলি করে ভক্তদের অপেক্ষা করতে হয় মায়ের দর্শনের জন্য। কিন্তু ক্ষীরপাইয়ের মায়ের মন্দিরে পুজো করার পদ্ধতি সত্যিই বিরল এবং অভিনব। তর্কে বহু দূর যাওয়ার থেকে বস্তু সমস্ত জিনিসকে বিশ্বাসে মিলিয়ে নিতে পারলেই সব কিছু সুন্দর। ভক্তের মধ্যে এভাবেই জাগ্রত হয়ে সারাবছর পুরোহিত ছাড়া পূজিতা হয়ে আসছেন ক্ষীরপাই এর বড়ো মা। আহা! এটাই তো বিশ্বাস।
চিত্র ঋণ – https://in.worldorgs.co
Discussion about this post