তৎকালীন পূর্ববঙ্গ তথা আজকের বাংলাদেশের দিনাজপুরের মহারাজা প্রাণনাথ ছিলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ভক্ত। আর শ্রীকৃষ্ণের নানা গুণের কারণে তাকে প্রায় ১০৮ নামে ডাকা হতো। এসব নামের মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে শ্রীকান্ত। মহারাজা প্রাণনাথ শ্রীকৃষ্ণের ‘কান্ত’ নামকে বেছে নিয়ে তার সাথে ‘জীউ’ সম্মানসূচক উপাধি যোগ করে মন্দিরের নাম দিয়েছেন ‘কান্তজীউ মন্দির’। ফলে এই ঐতিহাসিক মন্দিরটি কান্তজীউ মন্দির নামেই পরিচিতি লাভ করে। কান্তজীউ মন্দিরের নির্মাণের সূচনাকাল ১৭০৪ খৃষ্টাব্দে।
বাংলাদেশের উত্তরের জেলা দিনাজপুরে অবস্থিত এই মন্দিরটি। দেওয়াল জুড়ে অলঙ্করণ। পোড়া মাটিতে দারুণভাবে ফুটিয়ে তোলা। তিনটি পৌরাণিক কাহিনীর ঘটনাবলী নিখুঁতভাবে আঁকা হয়েছে শিল্পীর হাতের ছোঁয়ায়। মহাভারত, রামায়ণের পুরো কাহিনী চিত্রিত হয়েছে। সেই সাথে অসংখ্য প্রেমিক-প্রেমিকার হৃদয় ঘনিষ্ঠতার ছবি এবং তৎকালীন সমাজ-সামাজিকতার বাস্তবরূপ ফুটে উঠেছে পরতে পরতে। পোড়ামাটির তৈরি এসব শিল্প বিস্ময়কর লাগে ভ্রমণ এবং শিল্পপ্রেমীদের চোখে।
মন্দিরের পশ্চিম দিকের পুরো অংশেই তৃতীয় ধাপের সূক্ষ্ম অলঙ্করণে কৃষ্ণ কাহিনীর বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে। এ অলঙ্করণ শেষ হয়েছে মধুরার দানব রাজা কংসকে হত্যার মধ্য দিয়ে। এখানে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে কংসের দানবাকৃতির খুনে হাতি কবল্লপীড়ার ধ্বংস, মথুরায় কংসের সঙ্গে দ্বন্দ্ব যুদ্ধে কৃষ্ণকে অংশগ্রহণে বিরত করতে না পেরে রাধার জ্ঞান হারানো। এসব চিত্রের মধ্যে দন্ডের দুই প্রান্তে ঝোলানো শিকেতে দুধ ও মাখন বহন করা গোয়ালার চিত্র খুবই আকর্ষণীয়, যা এখনও গ্রাম বাংলার অতি পরিচিত দৃশ্য। বাংলাদেশের যে কোন স্থাপত্য শিল্পের চেয়ে এটি বেশি দৃষ্টি নন্দন।
Discussion about this post