৩০শে এপ্রিল, ১৯০৮। ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকী মজফ্ফরপুরে কিংসফোর্ডকে বোমা মেরে হত্যার প্রচেষ্টা চালালেও তা সফল হল না। উপরন্তু ঘটনার ফলস্বরূপ তৎকালীন ব্রিটিশ পুলিশ ব্যাপক ধরপাকড় অভিযান শুরু করে। কলকাতার মুরারী পুকুর সহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বহু বিপ্লবীকে গ্রেপ্তার করা হয়। উদ্ধার হয় প্রচুর আগ্নেয়াস্ত্র। আবিষ্কৃত হয় একটি গোপন বোমা তৈরীর কারখানা। শুরু হয় আলিপুর বোমা মামলা।
গ্রেফতার হওয়া বিপ্লবীদের মধ্যে ছিলেন কানাইলাল দত্ত, উল্লাস কর দত্ত, বারীন ঘোষ, অরবিন্দ ঘোষ, উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, নরেন্দ্রনাথ গোস্বামী ওরফে নরেন গোঁসাই প্রমুখ। ভীরু ও দুর্বল চিত্তের নরেন পুলিশী অত্যাচার এড়াবার জন্য রাজসাক্ষী হতে সম্মত হন এবং পুলিশের কাছে বিপ্লবীদের বহু গোপন ডেরার সন্ধান দিতে থাকেন। যার সূত্র ধরে অন্যান্য অঞ্চল থেকেও বহু বিপ্লবীদের গ্রেপ্তার করা হতে থাকে। জেলবন্দী বিপ্লবীরা বুঝতে পারেন, এককালের সহযোদ্ধাই বর্তমানে বিশ্বাসঘাতক। সে বেঁচে থাকলে বানচাল হয়ে যাবে আগামী দিনের সব পরিকল্পনা। মুখ থুবড়ে পড়বে স্বাধীন ভারতবর্ষ গড়ে তোলার লড়াই।
তাই জেলে বসেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, নরেনকে চিরতরে চুপ করিয়ে দিতে হবে। দায়িত্ব পড়ে দুই তরতাজা যুবক কানাইলাল দত্ত ও সত্যেন্দ্রনাথ বোসের ওপর। পরিকল্পনা মাফিক গোপনে জোগাড় করা রিভলভার দিয়ে প্রেসিডেন্সী জেল হাসপাতাল চত্বরে রাজসাক্ষী নরেনের ওপর গুলি চালালেন কানাইলাল। লুটিয়ে পড়লো নরেনের নিথর দেহ বিপ্লবীদের প্রাণাধিক প্রিয় মাতৃভূমির বুকে। ধুলোর ওপর দিয়ে বয়ে চলল রক্তিম স্রোত। সম্পন্ন হলো বিশ্বাসঘাতকতার চরম শাস্তিদান – মৃত্যু। এরপর ১৯০৮ সালের ১০ই নভেম্বর, মাত্র কুড়ি বছর বয়েসে কানাইলাল দত্ত ফাঁসির মঞ্চে শহীদ হন।
Discussion about this post