যে দেশে হিন্দু মন্দিরের অস্তিত্ব অবিশ্বাস্য, সেখানে এক জাগ্রত কালীমাতা! পাকিস্তানের বালুচিস্তান প্রদেশে দাঁড়িয়ে আছে দেবীর শক্তিপীঠ, যাঁকে সমীহ করে আজও কেঁপে ওঠে পুরো অঞ্চল। সীমানা, ধর্ম, রাজনীতি সবকিছুকে অতিক্রম করে এখানে এখনও প্রতিদিন উচ্চারিত হয় কালীস্তব। হাজার হাজার বছরের পুরনো এই মন্দির যেন মরুপ্রান্তরে এক অলৌকিক বিস্ময়।
দেশ বিভাজনের পর দুটি বিভক্ত অংশেই অসংখ্য ধর্মীয় আগ্রাসনের নিদর্শন ঘটেছে। হিন্দু মুসলিম ধর্মের এই বিরুদ্ধতার বীজ বপন করে দিয়ে গেছে ঔপনিবেশিক শক্তি ব্রিটিশরা। কিন্তু কিছু ঐতিহাসিক স্থাপত্য অটুট থেকে গেছে স্থানীয় মানুষের জীবনযাপনের গভীরে মিশে। যার মধ্যে অন্যতম কালাট কালী মাতা মন্দির। আনুমানিক ৭৪ খ্রিস্টাব্দ থেকেই এখানে পূজিত হচ্ছে দেবী কালী। দুই হাজার বছরেরও বেশি সময়! প্রায় কুড়ি ফুট উচ্চতার কালো নীলবর্ণ বিগ্রহে কালী রণসাজে সজ্জিতা। গলায় করোটির মালা, শিবের বুকে দাঁড়িয়ে!
এই মন্দির ঘিরে ধর্মীয় সহাবস্থানের এক অনন্য রূপ দেখা যায়। বালুচ মুসলিম থেকে স্থানীয় শিখ সম্প্রদায় সকলেই সমান নিষ্ঠায় যুক্ত থাকেন প্রতিটি উৎসব-অনুষ্ঠানে। মন্দিরের সামনে গুরু নানকের ছবিও স্থাপিত; শোনা যায় বহু শিখগুরু ও বীর কখনো না কখনো এসেছেন এই দরবারে মাথা নত করতে। পাকিস্তানি রাজনীতিবিদ, সেলিব্রেটিরাও নাকি সুযোগ পেলেই মা কালাটেশ্বরীর সামনে সিল্কের ফেট্টি বেঁধে প্রণাম করেন, বিশ্বাস করেন তাঁর আশীর্বাদে সব সমস্যার সমাধান।
স্থানীয় জনশ্রুতি অনুযায়ী এই মন্দির ভাঙতে গেলে অবধারিত বিপদ। ইতিহাসের নানা সময়ে সেই চেষ্টা নাকি হয়েছে, কিন্তু রহস্যময় মৃত্যু আর অজানা ভয়ে সবাই পিছিয়ে গেছে। রাজনৈতিক উত্তাপ একাধিকবার উঠেছে, কিন্তু বালুচ জনগণের আবেগের সামনে ব্যর্থ হয়েছে সেই সকল উদ্যোগ। তাই আজও মরুর বুক চিরে উজ্জ্বল হয়ে আছে কালাট কালী মাতার মন্দির। ধর্মের সীমানা ভেঙে পাকিস্তানের বুকে দাঁড়িয়ে থাকা এক শক্তি ও সহিষ্ণুতার প্রতীক।







































Discussion about this post