ঢাকের বাদ্যি থেমে গিয়েছে ঠিকই, তবে আসল বাজনা বাজে মানুষের মনে। দুর্গা পুজো কেটে গিয়ে এবার পালা কালী পুজোর। ঐতিহ্যের সঙ্গে সংস্কৃতির মিশেল বহুবার দেখা গিয়েছে। তবে এ যেন এক অন্য গল্প। যে পুজো শুরু হয় না স্বয়ং মায়ের আশীর্বাদ ছাড়া। শুধু মা কালীই নন এ বাড়িতে বিরাজ করেন মহাদেবও। তার বহু পুরনো একটি মূর্তি আজও নতুন মনে হয়।
মা কালী তো সবাইকেই আশীর্বাদ করেন। তবে এ ক্ষেত্রে নতুন কী? আসলে এ বাড়ির পুজোয় মা সংকেত পাঠান। তারপর শুরু হয় পুজো। অমাবস্যা তিথির শুরুর সাথে মায়ের কাছে আশীর্বাদ স্বরূপ চাওয়া হয় ফুল। সেই ফুল পেলে তবেই এ বাড়ির কালী পুজো শুরু হয়। আর এভাবেই এ পুজো পেরিয়ে এসেছে প্রায় ২৭০ বছর। পুজোয় বাড়ির সদস্যদের মিলনও এক অনবদ্য স্বাদ। ধর্ম আসলেই মানুষকে একত্রিত করে।
পূর্ব বর্ধমানের কুচুট গ্রামে এ পুজো সবার কাছে এক ডাকে পরিচিত। ‘বুড়ো মা’য়ের পুজোকে ঘিরে বেঁচে রয়েছে ইতিহাস। এ বাড়ির প্রথম পুরুষ রাধাকান্ত দেব শর্মার হাত ধরে শুরু হয় এই শক্তির আরাধনা। বাড়ির কূল দেবতা বিষ্ণু নারায়ণ হওয়াতে মা কালীর জন্য রয়েছে আলাদা মন্দির। সে মন্দির শুরুর দিকে ছিল খড়কুটোর। ধীরে ধীরে সময়ের সাথে তা কংক্রিটের হয়েছে। পুজোর ঘট তাই বিষ্ণু নারায়ণ মন্দির হয়ে এসে পৌঁছয় মা কালীর মন্দিরে।
বাড়ির সকলে নির্জলা উপোস থেকে প্রতি বছর নিষ্ঠার সাথে করে আসছেন এই পুজো। আগে অবশ্য ছাগ বলির রীতি ছিল। তবে এ বাড়ির বর্তমান সদস্য সদানন্দ মুখার্জির মতে, “মা কখনো তার সন্তানের রক্ত চাইতে পারেন না। তাই ছাগ বলি বন্ধ।” তবে রয়ে গিয়েছে আঁখ এবং চাল কুমড়োর বলি প্রথা। অন্যদিকে, এ বাড়ির মায়ের বিসর্জন হয়ে যায় পুজোর পরের দিনেই। সেদিনও চলে যজ্ঞ। এ বাড়ির মায়ের বিসর্জন হলে তবে আশপাশের বাকি কালী প্রতিমার বিসর্জনের পালা আসে।
চিত্র ঋণ – অভীপ্সা মুখার্জি
Discussion about this post