বাঙালির আবেগের পুজোমাসটা এখন প্রায় অন্তিম লগ্নে। বিজয়ার শুভেচ্ছা বিতরণের পালা শেষ। আটপৌরে লক্ষ্মীপুজোর ঘটটাও বিসর্জন গিয়েছে বেশ কয়েকদিন। এবার পুজোমাসের শেষ আকর্ষণ শ্যামাপুজো। মৃন্ময়ী মূর্তির চিন্ময়ী রূপ পেতে আর মাত্র কয়েকটা দিনের অপেক্ষা। কালীপুজোর আড়ম্বরটা বাঙালি মহলে দূর্গাপুজোর তালেই হয়ে থাকে। এইসময় আমাদের পরিচিত সেই পটুয়াপাড়াতেও বেশ সাজো সাজো রব ওঠে। চলে প্রস্তুতিপর্ব। চলে কাদামাটির কাঠামোকে মন্ডপের নিখুঁত প্রতিমায় সাজিয়ে তোলার তোড়জোড়।
কিন্তু চলতি বছরের চিত্রটি একেবারেই আলাদা। লকডাউনের জেরে সাধারণ জনজীবন একরকম বিপর্যস্ত। তাহলে কুমোরটুলির মৃৎশিল্পীদের লাভ-ক্ষতির হিসেব-নিকেশটা কিরকম ? কেমন চলছে পালপাড়ার সংসারগুলো? বাঙালির বারো মাসেই নানা পুজোর চাহিদা থাকে অল্পবিস্তর। তাই কুমোরটুলির অলিগলিতে সারাবছর দাঁড়িয়ে থাকে খড়মাটির কাঠামোগুলো। তবে এবছর ছোটখাটো অনেক কালী পুজোই পড়েছে বাতিলের খাতায়। তাই সেরকম বায়নাও পায়নি শিল্পীপাড়া। তবুও পুজোমাসকে কি বাঙালি অবহেলায় এড়িয়ে যেতে পারে ? খদ্দের কমলেও গড়ে ২০-২৫ টা করে বায়না পেয়েছেন মৃৎশিল্পীরা। যেখানে অন্যবছর এই হিসেবটা ৫০-৬০ পেরিয়েই যায়। প্রতিমার চাহিদা পড়ে যাওয়ায় দামও এবছর বেশ চড়া। তার ওপর কর্মীরা প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়ায় কর্মীসংখ্যা খুবই কম।
মিনাক্ষী পাল নামের এক মহিলা মৃৎশিল্পী জানান, ৪ থেকে ৫ জন মিলেই সামাল দিচ্ছেন সব বায়নার কাজ। ব্যস্ততা থাকলেও গতি বেশ মন্থর। তাই প্রতিমা প্যান্ডেলে ঢুকতে দেরি হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। এদিকে খুব বড় আকৃতির অর্থাৎ ১০-১২ ফুটের প্রতিমার বায়না এসেছে হাতে গোনা। মাঝারি (৬-৮ ফুট) ও ছোট সাইজের (৪ ফুট) প্রতিমার চাহিদাই এবছর বেশী। সার্বিকভাবে বলা যায়, চলতি মরসুমে কুমোরটুলির রোজগারে বেশ মন্দায় ছোঁয়া। মে মাসের আমফানের তান্ডবে বেশ কিছু পটুয়াশিল্পীর বাড়ি ও কাজের জায়গার ক্ষতি হয়েছিল। তাঁরা পুজো মাসের আয়ের অপেক্ষায় দিন গুনছিলেন। কিন্তু সেদিকেও বাধ সাধল বর্তমান পরিস্থিতি।
হ্যাঁ, কুমোরটুলির যে দৃশ্যপটে আমরা অভ্যস্ত ,তার ছিটেফোঁটা নেই এবছরটায়। ফাঁকা রাস্তা, গুটিকতক খদ্দের। নিছক ঘোরা মানুষের সংখ্যাটাও প্রায় নেই। নির্বিকার হয়ে কাজে ব্যস্ত শিল্পীমহল। তবুও তাঁরা আশাবাদী, “আসছে বছর আবার হবে।”
চিত্র ঋণ – চাঁদ কুমার ঘোষ, তীর্থ নারায়ণ ভট্টাচার্য্য, তথ্য সহযোগিতা – তীর্থ নারায়ণ ভট্টাচার্য্য
Discussion about this post