খাবারের বৈচিত্র্য যদি বাঙালির অহঙ্কারের লিস্টে প্রথমে থাকে, তাহলে নিশ্চিতভাবেই দ্বিতীয় স্থানটি তোলা থাকবে পোশাকের জন্য। আর পোশাকের বৈচিত্রের সাম্রাজ্যে অন্যতম জায়গা ধরে রেখেছে বুটিক শিল্প। ঘরে ঘরে না হলেও অন্ততঃ “পাড়ায় পাড়ায় এখন বুটিকের দোকান”, এ কথা হামেশাই শোনা যায়। প্রায় সব বুটিকই দাবী করেন ন্যায্য দামে, যোগ্য গুণমানে ক্রেতাদের মন জয় করার মন্ত্র তাদের জানা। এরই মধ্যে জন্মের মাত্র ৩৬৫ দিনের মধ্যেই মানুষের মনে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে কৈরভী। মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুরে তাদের আঁতুড়ঘর হলেও সাড়া বাংলা তথা ভারতেই তাঁরা অনলাইন ডেলিভারি দিয়ে থাকেন তাদের পণ্য।
মাত্র ১ বছর বয়েস কৈরভীর। এরই মধ্যে তাঁরা লাখ লাখ মানুষের মধ্যে পৌঁছে যেতে পেরেছেন এমনটাও নয়। কিন্তু যে ক’জন ক্রেতা তাদের প্রোডাক্ট কিনেছেন, তাঁরা আক্রান্ত হচ্ছেন কৈরভীর প্রোডাক্টের গুণমান, নতুনত্বে। একবার সেই পোশাক ব্যবহার করে তাঁরা টের পাচ্ছেন যে সেই পোশাকের প্রতি ভালোবাসার বাঁধনে আটকে পড়েছেন। আর তারই ফলে সেই ক্রেতারা আর অন্য বুটিক নয়, ফিরে আসছেন কৈরভীর কাছেই।
এই যেমন ধরুন কলকাতার ডাক্তার সৌমিকা বিশ্বাস। তিনি বললেন, “সাধারনতঃ বুটিকগুলির ক্ষেত্রে ঠিক যেরকম আমরা ছবি কিংবা ভিডিওতে প্রোডাক্ট দেখে থাকি। আমাদের কাছে সেটি ডেলিভারি হয়ে আসলে দেখা যায় কিছুতেই ছবিতে দেখা প্রোডাক্টের মতো সুন্দর নয়। কিন্তু কৈরভীর ক্ষেত্রে ঠিক উল্টো-পুরাণ। ছবিতে তাঁরা যা দেখিয়েছেন তার থেকেও বেশি সুন্দর লাগছে।” সৌমিতা আরও বলেন, “ঠিক যেরকম চেয়েছি সেরকমই পেয়েছি। আমার পাঁচ বছরের বাচ্চা যাতে সারাদিন পরে থাকতে পারে ঠিক সেরকমই পোশাক কৈরভী দিয়েছে। সুন্দর ফিটিংস, প্যাকেজিং এবং ডিজাইনই শুধু নয়। মাত্র দু’দিনের নোটিসে তাঁরা আমার দুই বাচ্চার জন্যই সুন্দর পাগড়ি বানিয়ে দিয়েছে, যেটি পরতেও আরামদায়ক।”
কৈরভীর বিষয়ে জানতে আমরা যোগাযোগ করি, হায়দ্রাবাদের পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ার মৌমিতা সেনের সঙ্গে। তিনি জানান, কৈরভীর জন্মলগ্ন থেকেই তিনি এই বুটিকের ক্রেতা। তাঁর ভাষায় ” কৈরভীর ডিজাইন, আর্ট ওয়ার্ক, ফেব্রিক আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমার মূলতঃ ভালো লাগে ওয়েস্টার্ন ড্রেসের ওপর ভারতীয় পটচিত্র। ফ্যামিলি কাপল সেট আমি ব্যবহার করেছি। ওরা খুব যত্ন নিয়েই সেগুলো আমার চাহিদা মতো বানিয়ে দিয়েছেন। বিশেষ করে বলব বাচ্চাদের ড্রেসের কথা। অন্যান্য বুটিকের ক্ষেত্রে দেখা যায় বাচ্চাদের পোশাক না হয়ে সেটি আসলে বড়দের পোশাকের রেপ্লিকা হয়ে যায়। কিন্তু কৈরভীর শিশুদের পোশাকে একটা সরলতা আর মাধুর্য রয়েছে।”
কৈরভীর তরফে সোমঋতা জানালেন শাড়ি, কাফতান, কুর্তি, র্যাপার, গাউন, টপের ওপর তাদের অনেক পরীক্ষামূলক কাজ রয়েছে। র্যাপারের ক্ষেত্রে নাকি রয়েছে ‘কাহানী মে টুইস্ট’। যে ট্রেডমার্কের গেট আপে তাঁরা ডিজাইন বানান সেটা সব র্যাপারেই এক থাকে। কিন্তু তাদের র্যাপারের তিনটে দিক চার কোণা, যদিও সামনের একটা দিক রাউন্ড। কিন্তু একটি র্যাপারের ভেতরের শিল্পকর্ম কোনভাবেই অন্য একটি র্যাপারে রিপিট হয় না। কৈরভীর হয়ে রাহুল জানালেন তাঁর এক অভিজ্ঞতার কথা। তিনি তাদের বুটিকেরই এক পরিচিত ক্রেতার বাড়িতে সম্প্রতি নেমন্তন্ন গিয়েছিলেন। সেই ক্রেতা সবার সামনেই জানালেন, কৈরভীর থেকে কেনা কুর্তি একাধিকবার ধোওয়ার পরেও সেটির ফেব্রিক এবং রং সামান্যতমও ওঠেনি। রাহুলের ভাষায়, “আমরা সেই গুনমান ধরে রাখার চেষ্টা করি। অনেকেই বলেন দাম কমাতে। কিন্তু আমরা এই জায়গায় পরিষ্কার বলে দিই যে দাম কমাতেই পারি। কিন্তু তাহলে আমরা আপনাদের মনের মতো কোয়ালিটি ধরে রাখতে পারবো না। আমাদের বুটিকেরও বদনাম হবে।”
Discussion about this post