শ্রীকৃষ্ণ কীর্তনে কথিত আছে ‘ ললাট লিখন খন্ডান না যায়।’ বাস্তব জীবনে এই বাণীকে ভুল প্রমাণ করে দিয়েছে কিছু নারী। আমরা আমাদের ভাগ্যকে জয় করতে পারি খুব সহজেই। তার জন্য প্রয়জন অধ্যাবসায় আর হার না মানার ক্ষমতা। এমনি কিছু অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছে আজমিরা, মাহফুজারা। পেরেছে পাট দিয়ে বিভিন্ন শিল্প বানিয়ে নিজেদের দুর্বিসহ জীবন কাটিয়ে উঠতে। করেছেন নিজেদের অন্ন সংস্থান, হয়েছেন স্বাবলম্বী। হয়তো উপার্জন সামান্য কিন্তু এই স্বল্প উপার্জনেই তারা আজ জীবন যুদ্ধে জয়ী।
আজমিরা ২০১৭ সালে সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় তার ডান পা হয়ে পড়ে পক্ষাঘাতগ্রস্ত। একে পঙ্গু বউ তার উপর কন্য সন্তান। এমন বউকে তালাক দিতে একবারও ভাবেনা তার স্বামী। আজমিরা ও তার ছোট্ট শিশু কন্যাকে বাড়ি থেকে বিতাড়িত করা হয়। মেয়েকে নিয়ে শুরু হয় তার জীবন সংগ্রাম। গরিব বাপের বাড়িতেও ঠাঁই হয় না তার। মনসুরা জুট হ্যান্ডিক্রাফট নামের একটি ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানে কাজ পায় সে। ছোটবেলা থেকেই আজমিরার বিভিন্ন জিনিসপত্র বানানোর অভ্যাস ছিল। আর সেই অভ্যাসকেই দেয় সে পেশার রূপ। বাড়িতেই বসে বানায় পাটের শতরঞ্চি ও নানান পাটজাত পণ্য।ইতিমধ্যেই সে পণ্য বানানোর প্রশিক্ষণ নিয়েছে। মাসে তার আয় ১২০০ টাকা। আয় স্বল্প হলেও আত্মনির্ভর হয়ে খুশি সে। মেয়ের সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন নিয়ে আজ আজমিরার গলায় আত্মবিশ্বাসের সুর। প্রতিদিন যেন আজমিরা স্বপ্ন বুনে চলেছে নিজের পাট বোনার মাধ্যমে।
আজমিরার মত আরও এক জীবন সংগ্রামের কঠোর যোদ্ধা মাহফুজা। ২০ বছর বয়সি মাহফুজা দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। গরিব পরিবারের মেয়ে হওয়ায় খুব অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যায় তার। সেখানেও অভাব অনটনের সংসার। এত অনটন সহ্য করতে না পেরে পাটজাত দ্রব্য তৈরির প্রশিক্ষণ নেয় সে। আর ঠিক এই মুহুর্ত থেকেই বদলে যায় তার জীবন। প্রতিদিন সে ৬ ঘন্টা কাজ করে আর আয় করে মাসিক ৩০০০ টাকা। সেই টাকা দিয়েই নিজের পড়াশুনা চালায় সে। আরও পড়াশুনা করে হতে চায় সে বড় মানুষ। নিজের স্বপ্নকে সত্যি করার উদ্দেশ্যে আজও অবিচল মাহফুজা।
আমাদের আশেপাশে এমন অনেক আজমিরা, মাহফুজারা ছড়িয়ে আছে। তারা আরও একবার প্রমাণ করে দেন নারী নিজেই পারে নিজের ভাগ্য জয় করতে। দু’বেলা দু’মুঠো ভাত জোগাতে তাদের সাহায্য করেছে এই পাট শিল্প। নিজেদের কর্মদক্ষতা ও প্রবল ইচ্ছাশক্তির মাধ্যমে পাট থেকে এই অসাধারণ শিল্পকলা ছড়িয়ে পড়ছে দেশ বিদেশে।
Discussion about this post