এবার যেন এক অচেনা রাস দেখছেন নবদ্বীপবাসী। হবে নাই বা কেন ? ২০২০ সাল তো মানুষের জীবন ধারণের চিত্রটাই পরিবর্তন করে দিয়েছে। হোক সে নিজের সাংসারিক জীবন কিংবা সামাজিক জীবন অথবা আনন্দ উৎসব। সব ক্ষেত্রেই এক বাধা করোনা! আর এই করোনা পরিস্থিতিই মানুষকে করে তুলছে ভার্চুয়াল। ফলে মানুষ এই ভাবেই হারিয়ে ফেলছে নিজেকে ক্রমাগত এক অন্য জগতে।
৩০ নভেম্বর, সোমবার ছিল নবদ্বীপ রাস উৎসবের শুরু। নবদ্বীপের বিখ্যাত আড়ং (শোভাযাত্রা) ১ ডিসেম্বর হওয়ার কথা থাকলেও সবটাই পাল্টে দিয়েছে করোনা! একে তো নবদ্বীপের বেশিরভাগ প্রতিমাই তার উচ্চতা কমিয়ে ফেলেছে। অন্যদিকে চলছে বাজনা ছাড়া রাস উৎসব! আমার প্রায় ২৯ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, এমন রাস আমি কোনদিন দেখিনি। আমি এটাও দেখিনি রাসের আগের রাতে পোড়ামাতলার মহিষাসুরমর্দিনীর সামনে কীর্তন হতে। রাসের আগের দিন থেকেই গোটা নবদ্বীপ শহর প্রায় ৫০০ বারোয়ারির বাজনার তালে কাঁপতে থাকে, যার সাক্ষী থাকে অসংখ্য মানুষের ভীড় ও উন্মাদনা। কিন্তু কোথায় কী!
শুধুমাত্র পাড়ায় পাড়ায় প্রতিমা পূজা হচ্ছে এইটুকুই। শ্রীবাস অঙ্গনের বিন্ধ্যাবাসিনী মাতার পূজা হচ্ছে আবার পটে! সন্ধ্যায় দেখা হল দেবাশিসদার সঙ্গে (দেবাশিস পাল নবদ্বীপের স্বনামধন্য শিল্পী), তাঁরও মন খারাপ। কারণ এতো সুন্দর সুন্দর মূর্তি গড়েন দেবাশিস দা, অথচ নিজের পাড়ার গৌরাঙ্গিনী মাতার মূর্তিই তো ঢেকে দেওয়া হল কাপড় দিয়ে। কারণ নবদ্বীপের ঐতিহ্যবাহী গৌরাঙ্গিনী মাতা বেহারার কাঁধে যাওয়ার অনুমতি পায়নি। তাই দোমেটে হওয়ার পরও ঠাকুর ঢেকে দেওয়া হল, রাতারাতি ছোট্ট মূর্তি গড়লেন দেবাশিস দা। এভাবেই নবদ্বীপের আবেগ ভেঙে দিল মারণ-রোগ।
তবে সব খারাপের মধ্যে একটি বিষয়ই ভালো লাগলো। রামসীতা পাড়ার বামাকালী মাতার পাশে বহু বছর বন্ধ থাকার পর আবার নতুন করে মহিষাসুরমর্দিনী মাতার পূজাটি শুরু হলো। আমাদের কারোরই জানা নেই করোনা আরও কত নতুন কিছু দেখাবে আমাদের ! তবে এই করোনা পরিস্থিতির জন্যই প্রশাসনকে বাধ্য হয়েই হয়তো এতো বিধি নিষেধ আনতে হল যার ফলে নবদ্বীপ রাস হয়ে উঠলো রস বিহীন।
প্রতিবেদক সপ্তক দাস, চিত্র ঋণ – নবদ্বীপ রয়্যাল সোসাইটি
Discussion about this post