“ছায়া সু-নিবিড় শান্তির নীড়” অরণ্য শহর ঝাড়গ্রামl প্রাচীন শাল বৃক্ষে ঢাকা এমন শহর ভূ-ভারতে প্রায় বিরল। যে শহরের সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে দেশ বিদেশের পর্যটক বারে বারে ছুটে আসতে বাধ্য হনl যদিও বিগত কয়েক বছরে সুন্দরী তার ‘শ্রী’ হারিয়ে রুক্ষ শুষ্ক এক কংক্রিটের জঙ্গলে পরিণত হয়ে চলেছে! ঝাড়গ্রামের বাসিন্দাদের অভিযোগ এলাকার যুবক যুবতীদের ক্রীড়া দক্ষতার উন্নয়নের নামে প্রাচীন শালগাছ কেটে স্টেডিয়াম নির্মাণ হয়। সেই স্টেডিয়াম বাস্তবে ব্যবহৃত হয় মুখ্যমন্ত্রী -প্রধানমন্ত্রীর জনসভা বা বিয়ের আসরের ভাড়াবাড়ি হিসেবে! ঝাড়গ্রামের বিভিন্ন সরকারী নির্মাণের সম্প্রসারণের জন্য কয়েক হাজার প্রাচীন শালগাছ কেটে ফেলা হয়েছে ইতিমধ্যেই l যার মধ্যে নবতম সংযোজন ঝাড়গ্রাম আদালত চত্ত্বরে ভবন তৈরির জন্য ফের ৬২ টি শতাব্দী প্রাচীন শালগাছ সহ শতাধিক গাছ কাটার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত। ঝাড়গ্রাম নাগরিক উদ্যোগ ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার নামে রাস্তায়।
সাম্প্রতিক সময়ে ‘ঝাড়গ্রাম নাগরিক উদ্যোগ’ দীর্ঘদিন ধরেই এই প্রাচীন শাল ও অন্যান্য গাছ কেটে ফেলার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার পাশাপাশি প্রশাসনের কাছে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। তাঁদের সঙ্গী হিসেবে এই আন্দোলনে পাশে থেকেছেন ডিএলএড কলেজের পড়ুয়ারাও। এই সম্মিলিত প্রতিবাদের ফলেই ডিএলএড কলেজ ক্যাম্পাসের ২৫২ টি গাছ বাঁচানো সম্ভব হয়। লাগাতার প্রতিবাদের ফলে তৎকালীন সহকারী জেলা ম্যাজিস্ট্রেট প্রতিশ্রুতি দেন “নির্মাণ কাজে আর গাছ কেটে ফেলা হবে না।” কিন্তু এই অতিমারীর মধ্যেই কয়েক সপ্তাহ আগে পুলিশ মর্গ নির্মাণের জন্য ছয়টি শালগাছ কেটে ফেলা হয়।এর প্রতিবাদে ঝাড়গ্রাম মহকুমা শাসকের কাছে ‘ঝাড়গ্রাম নাগরিক উদ্যোগ’ ডেপুটেশন দেয় l সোমবার প্রতিবাদের অঙ্গ হিসেবে ঘটনাস্থলে পোস্টারিং করা হয় এবং গাছের গায়ে লেখা হয় কিছু কথা।
ঝাড়গ্রাম নাগরিক উদ্যোগের পক্ষ থেকে অরূপ মহাপাত্র কথা বলেন ডেইলি নিউজ রিলের সঙ্গে। তিনি জানান “যে কোনো সরকারি নির্মাণ কাজে স্থানীয় সাধারণ মানুষের মতামতকে গুরুত্ব না দিয়ে কেবল সরকারি আধিকারিকদের, যাদের ঝাড়গ্রামের সবুজ সংরক্ষণে কোনো তাগিদ নেই, তাঁদের মতামতের ওপর ভিত্তি করেই অসংখ্য গাছ কেটে নির্মাণ কাজ হয়ে চলেছে। ফলে শালগাছে মোড়া ঝাড়গ্রাম তার ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলছে।” তবে এই পরিস্থিতিতে একটি বিষয় অনেকটাই পরিষ্কার। সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিরোধই ঝাড়গ্রামের বুকের সবুজকে বাঁচাতে পারবে।
Discussion about this post