রজার মুর, জর্জ ল্যাজেনবাই, টিমোথি ডাল্টন থেকে সাম্প্রতিকের পিয়র্স ব্রোসনান, ড্যানিয়েল ক্রেইগ, জেমস বন্ড ভূমিকায় অভিনয় করেছেন হলিউডের তাবড় তাবড় জাত অভিনেতারা। কিন্তু, বিশ্বের সবথেকে জনপ্রিয় বন্ড কে? এই প্রশ্নটা করলে সবার আগে যে মানুষটির কথা মাথায় আসবে তিনি হলেন স্যর শন কনেরি। ব্রিটিশ উপন্যাসিক ইয়ান ফ্লেমিংয়ের কালজয়ী চরিত্র জেমস বন্ডকে পর্দায় জীবন্ত করে তুলেছিলেন শন। ‘ডক্টর নো’ দিয়ে শুরু, তারপর ‘ইউ অনলি লিভ টোয়াইস’, ‘ডায়মন্ডস আর ফরএভার’, ‘নেভার সে নেভার এগেইন’ একের পর এক ছবিতে দাপিয়ে অভিনয় করেন শন। রুপালি পর্দায় বন্ডের চরিত্রে তিনি ছিলেন সর্বকালীন শ্রেষ্ঠ অভিনেতা।
তবে, শনের জীবনের শুরুটা কিন্তু একেবারেই জেমস বন্ডচিত ছিলনা। একটা সময়ে, জীবন জীবিকার তাগিদে স্কটল্যান্ডের রাস্তায় ঘুরে ঘুরে দুধ বিক্রি করতেন তিনি। সেই সময় অভিনেতা হবার কোন শখ কিংবা স্বপ্নও তার মনে ছিলনা। তখন, শন ছিলেন স্কটল্যান্ডের একজন অত্যন্ত সাধারণ মানুষ। অর্থ উপার্জনের জন্য প্রথমে তিনি যোগ দিয়েছিলেন ব্রিটিশ নৌবাহিনীতে। তবে খুব কমদিনের মধ্যেই, শারীরিক সমস্যার কারণে বাধ্য হয়ে তাকে ব্রিটিশ নৌবাহিনীর চাকরি ছেড়ে দিতে হয়। চাকরি ছেড়ে দেওয়ার পর, সেখানে থাকাটা শনের জন্য বেশ ব্যয়বহুল হয়ে ওঠে। অগত্যা, এডিনবরায় ফিরে এসে জীবনটা নতুন করে গোছাতে শুরু করেন শন।
রুটি রুজির তাগিদে যোগদান করেন বিভিন্ন চাকরিতে। লাইফ গার্ডের চাকরি থেকে শুরু করে, কফিন পালিশের কাজ পর্যন্ত করেছেন তিনি। বেতন কম থাকায় সেইসব চাকরি ছেড়ে যোগ দেন ট্রাক চালানোর কাজে। একটু বেশি বেতন থাকার কারণে ট্রাক চালানোর কাজটা অনেক বছর চালিয়ে যান শন। তবে, বডিবিল্ডিংয়ের শখটা ছোটবেলা থেকেই ছিল তার মনে। ১৯৫৩ সালে লন্ডনে বডি বিল্ডিং প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন শন। তখন থেকেই পাল্টে যায় তার ভাগ্য। কিংস থিয়েটারের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে পরবর্তী কয়েক বছর, টেলিভিশন এবং সিনেমায় বিভিন্ন পার্শ্ব চরিত্রে চুটিয়ে অভিনয় করলেন শন। তবে প্রধান চরিত্রে অভিনয়টা একটু পরে।
১৯৬০ সালে ইয়ান ফ্লেমিং ভাবলেন জেমস বন্ডকে নিয়ে ছবি বানাবেন। শুরু হলো ডক্টর নো এর অডিশন। প্রযোজকদের ভরসা সাথে নিয়ে, প্রথম প্রচেষ্টাতেই ফ্লেমিংয়ের জেমস বন্ডকে পর্দায় জীবন্ত করে তুললেন শন। প্রাথমিকভাবে অখুশি থাকলেও, পর্দায় শনের উপস্থিতি দেখে আপ্লুত হলেন ফ্লেমিংও। এর পর আরো ৬টি বন্ড মুভিতে অভিনয় করলেন শন। ১৯৮৭ সালে নিজের জেমস বন্ডের ইমেজকে ঝেড়ে ফেলে আইরিশ পুলিশের ভূমিকায় ‘দ্যা আনটাচেবলস’ ছবিতে অভিনয় করেন শন। সেই ছবির জন্য সেরা সহ-অভিনেতা হিসেবে অস্কারও জিতে নেন তিনি। এছাড়াও, কালজয়ী ইন্ডিয়ানা জোন্স ছবিতেও একটা বড় চরিত্রে অভিনয় করেন শন। অভিনয় জীবনে একাডেমী অ্যাওয়ার্ডের পাশাপাশি দুটি ব্যাফটা এবং তিনটি গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন তিনি। অবশেষে, ৩১ অক্টোবর ২০২০ তারিখে বাহামা দ্বীপপুঞ্জে নিঃশব্দে ঘুমের মধ্যেই ভক্তদের শেষ বিদায় জানান আমাদের সবার প্রিয় প্রথম বন্ড, শন কনেরি।
Discussion about this post