দুদিন আগে অবধিও তীব্র অস্বস্তিকর গরমের চোটে কাতরাচ্ছিল বঙ্গবাসী। যদিও আবহাওয়াবিদদের মতে, এখনই মিলছে না গরমের হাত থেকে রেহাই। স্বস্তির বৃষ্টি এখনও কয়েক মাইল দূরে। আর এই গরমের দিনে বাঙালির একসময় একমাত্র ভরসা ছিল তালপাতার পাখার মিষ্টি বাতাস। গরমের দুপুরে লোডশেডিংয়ের সময় শীতলপাটিতে শুয়ে তালপাতার পাখার হাওয়া খাওয়াটা ছিল এক স্বর্গীয় অনুভূতি। সেই গ্রিক রোমান সভ্যতার যুগ থেকে চলে আসছে এই হাত পাখার ব্যবহার। এখন এসব অতীত। তবে অতীতের এই ঐতিহ্যই মুখে ভাত তুলে দিচ্ছে ঝাড়গ্রাম জেলার জামবনী ব্লকের দুবড়ার কালিন্দী পাড়ার ৩৫ থেকে ৪০টি পরিবারে। তালপাতা থেকে পাখা তৈরি করেই জীবনযাপন করেন গোটা গ্রামের মানুষ।
শুধু দেশেই নয়, এমনকি বিদেশেও পাড়ি দিচ্ছে তাদের তৈরি পাখা। চাহিদাও রয়েছে বেশ। আধুনিকতার যুগে আজও কদর করে মানুষ এই শিল্পের। আসলে লোডশেডিংয়ের সময় আরও গুরুত্ব বেড়ে যায় তালপাতার পাখার। তাই গ্রামের মানুষজন গ্রীষ্মকালের ৪-৫ মাস লাগাতার পাখা তৈরির কাজে ব্যস্ত থাকে। গ্রামবাসীরা প্রতিদিন প্রায় ৫০ থেকে ১০০টি পাখা বানাতে পারেন। বর্তমানে দোকানে তা বিক্রি হয় এক হাজার টাকায় ১০০ পিস। পাখা তৈরির জন্য বিশেষ খরচ না হওয়ায় লাভের পরিমাণ অনেকটাই বেশি। পাড়ার প্রতিটা বাড়ি থেকে সপ্তাহে গড়ে তিন থেকে চারশো পাখা বিক্রি হচ্ছে। বিদেশেও এই পাখার চাহিদা রয়েছে।
জেনে নেওয়া যাক কীভাবে গ্রামবাসীরা এই তালপাতা দিয়ে পাখা তৈরি করে বাঁচিয়ে রেখেছেন এই শিল্পকে। আসলে পাতা কাটার পদ্ধতিটাই আসল। কীভাবে কাটলে একটা পাতা থেকে অনেক পাখা তৈরি করা যায়, তা জানা সবচেয়ে জরুরি এবং লাভজনও বটে। সবার প্রথমে তালপাতাগুলোকে গোল করে কাটা হয়। তারপর পাতার মাঝখানে ডাঁটি রেখে পাতার চারপাশ ভালো করে সেলাই করে দেওয়া হয়। এরপর পাতার উপর নকশা কাটা হয়। তারা জানেন, মানুষ এখন অনেক বেশি নান্দনিক সৌন্দর্যে আকৃষ্ট, তাই সুন্দর নকশা করলে তাদের তৈরি পাখার কদর আরও দ্বিগুণ বেড়ে যায়। উপরন্তু ভালো দামও পাওয়া যায়।
অন্যান্য সময়ে অবশ্য তারা সংসার চালানোর জন্য নানা ধরনের কাজ করে থাকেন। তবে তাদের হাতের জাদুতে আজও তালপাতার পাখায় মজে দেশ ও বিদেশবাসী। আধুনিকতার করাল গ্রাসে হয়তো আজকাল মানুষ ভুলে যায় পুরনোর কদর করতে। তবে একথা ঠিক তীব্র গরম থেকে বাঁচতে এসি, কুলারের ব্যবহার বাড়লেও তালপাতার পাখার কিন্তু জুড়ি মেলা ভার। কারণ কথাতেই আছে, বাঙালির তিন সম্বল, “শীতের কাঁথা, বর্ষার ছাতা আর গরমের পাখা”। বেঁচে থাকুক এসমস্ত শিল্পীদের হাতের জাদু আর বাঁচিয়ে রাখুক তালপাতার পাখার মিষ্টি বাতাস।
Discussion about this post