“শিবের সনে কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতী আশ্বিন মাসে বাপের বাড়ি আসে ভগবতী।” যদিও এই পুজোয় ভগবতীর চার সন্তান এবং স্বামী মহাদেব ছাড়াও সঙ্গে আসেন ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং দুই সখী জয়া, বিজয়া এবং দেবী মহামায়া। কথা হচ্ছে, জলপাইগুড়ির বৈকুন্ঠপুর রাজবাড়ির দুর্গা পুজোর। জলপাইগুড়ি রাজবাড়ির প্রতিষ্ঠাতা রাজা শিশু সিংহের আমলেই এই দুর্গাপুজোর প্রচলন। যার বয়স এখন প্রায় ৫১২ বছরের কাছাকাছি। তবে সেই রাজ আমল আর নেই। পরিবারের অনেক সদস্যই কাজের সূত্রে রাজ্যের বাইরে। কিন্তু পুজোয় সকলে হাজির রাজবাড়িতে। আগের মতো আড়ম্বর হয়তো নেই, কিন্তু ভক্তি আর ঐতিহ্যে এতটুকুও ভাঁটা পড়েনি আজও।
আরও পড়ুন নবমীর ভোগে আত্রেয়ীর রাইখর! এমনই নিয়ম বালুরঘাটের পাল বাড়ির পুজোয়
আশ্বিনে নয়, এখানে মায়ের আরাধনার প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায় জন্মাষ্টমীর পরের দিন কাঠামো পুজোর মাধ্যমে। ‘মা আসছেন’ এখন কোমর বেঁধে লাগতে হবে পুজোর আয়োজনে। এদিন নন্দোৎসবেই সূচনা ঘটে আসন্ন শারদীয়ার। এই উৎসব মূলত কাদা খেলা। তবে সে খেলাও নিছক কাদায় লুটোপুটি খাওয়া নয়। এই মাটি দিয়েই যে গড়া হবে দেবী প্রতিমা। দেবী এখানে তপ্ত কাঞ্চণবর্ণা। তাঁকে সাজানো হয় বেনারসি শাড়িতে। গলায় থাকে সোনা এবং নবরত্নের হার। কোচবিহারের বড়দেবীর ন্যায় বৈকুন্ঠপুর রাজবাড়িতেও দেবী একইসঙ্গে ব্যাঘ্র এবং সিংহবাহিনী। সিংহের একজোড়া ডানাও বর্তমান।
আরও পড়ুন ঠিক যেন বাড়ির মেয়ে! দেবীকে লজেন্স ভোগ দিয়েছিলেন দুই বিপ্লবীর বংশধর
‘কালিকা পুরাণ’ মতে এখানে সম্পন্ন হয় পুজো। মহালয়াতে পরিবারের সকলের উপস্থিতিতে তর্পণ ও চক্ষুদান। সেদিনই আয়োজন করা হয় কালীপুজোর। মহাসপ্তমীতে সম্পন্ন হয় ‘অর্ধরাত্রি পুজো’। যেখানে বাইরের দর্শনার্থীর প্রবেশ নিষিদ্ধ। নরবলির প্রচলন ছিল একসময়। তবে সেসব আর নেই।পরিবর্তে চালের গুঁড়ো দিয়ে তৈরি পুতুলই বলি দেওয়া হয়। অষ্টমীতে কুমারী পুজোর আকর্ষণে দর্শনার্থীর ভিড়ে উপচে পড়ে মন্দির প্রাঙ্গণ। তবে দেবীকে পুজোর প্রতিদিনই দেওয়া হয় আমিষ ভোগ। খামতি রাখা হয়না উমার যত্ন-আত্তিতে। কিন্তু অবশেষে বিষাদের সুর। ঢাকের কাঠিতে বেজে ওঠে বিসর্জন বাজনা।আবার একটি বছর পর উমা আসবে ঘরে।
আরও পড়ুন সার্বজনীন এই পুজো শুরু বণিকদের হাত ধরে, যার সাক্ষী কুলিক নদী!
প্রতিমা নিরঞ্জনের রীতিমতো আয়োজন করা হয় শোভাযাত্রার। উমা যেন বুঝতে না পারে মর্ত্যবাসীর মনখারাপ। সপরিবারে দেবীকে রথে চাপিয়ে নিয়ে আসা হয় রাজবাড়ি দীঘি পর্যন্ত। অন্তিম মুহূর্তে শেষবারের মতো বিদায় জানায় ভক্তগণ। তবে প্রতিমা নিরঞ্জনে হাজির থাকেন না রাজপরিবারের কোনো সদস্যই। দীর্ঘদিনের এই নিয়ম। নিরঞ্জনের পর আবার নিয়ে আসা হয় পুরনো প্রতিমা কাঠামো। একই কাঠামোতেই প্রতিমা তৈরি হয়ে আসছে বছরের পর বছর ধরে। আবারও অপেক্ষা জন্মাষ্টমীর। কবে কাঠামোয় পড়বে মাটির প্রলেপ! পাঁজিও জানান দেবে উমার আর আসতে দেরি নেইকো!
Discussion about this post