বাংলাদেশের ঢাকা নগরীর মধ্যেই সবচেয়ে প্রাচীন অঞ্চলটি ‘পুরান ঢাকা’ নামে পরিচিত। ব্যবসা-বাণিজ্যের আঁতুড়ঘর এই পুরান ঢাকা অঞ্চলের বাসিন্দারাও এখানকার পুরনো অধিবাসী। সমগ্র ঢাকার থেকে পুরান ঢাকার সংস্কৃতি, চরিত্রও অনেক আলাদা। এই অঞ্চল পরিচিত ছিল ‘বায়ান্ন বাজার তেপান্ন গলি’র দেশ নামে। এই ‘বায়ান্ন বাজার তেপান্ন গলির’ই তাঁতিবাজার অঞ্চল। তার অলিগলিতে রয়েছে অসংখ্য পুরনো খাবার দোকান। বাংলাদেশ মানেই আমাদের মনে আসে হরেক রকমের মাছ, মাংস, কাচ্চি, বিরিয়ানি, ভুনা, ভর্তার ছবি। কিন্তু খোদ পুরান ঢাকাতেই এমন একটি হোটেলের কথা বলব, যেটি সম্পূর্ণ নিরামিষাশী। আরো আশ্চর্যের বিষয় প্রায় ২০ বছরেও এসব খাবারের চাহিদা কমেনি।
তাঁতিবাজারের শিবমন্দির থেকে ডান দিকে এগোলেই পাওয়া যাবে ‘জগন্নাথ ভোজনালয়’। সরু গলিতে বৈদুত্যিক খুঁটি আর কালো তারের বেড়াজালে অনেকটাই লোকচক্ষুর আড়ালে নাম লেখা সাইনবোর্ডটি। তবুও এটিই এই এলাকার বাকি নিরামিষ হোটেলগুলির মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়। পুরান ঢাকার তাঁতিপাড়া অঞ্চলে নিতাই পাল শুরু করেছিলেন এই জগন্নাথ ভোজনালয়। বর্তমানে মালিকানার বদল হয়েছে ঠিকই, কিন্তু স্বাদের মান বদলায়নি মোটেও। মূলত সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য হোটেলটি প্রতিষ্ঠা হলেও, আজ সমস্ত ধর্মের মানুষের জন্যই হোটেলের দরজা উন্মুক্ত। দূরদুরান্ত থেকেও বহু মানুষ খেতে আসেন।
জগন্নাথ ভোজনালয়ে দৈনিক ১৬-১৭ পদের রান্না হয়। রসা, বড়া, শুক্ত, বিভিন্ন তরকারি, বুট, মাষকলাই ও মুগ ডাল সবই মেলে। একাদশীর দিন পাওয়া যায় পুষ্পান্ন, খিচুড়ি, ছানার রসা, বাদাম ভুনা, ফুলকপির রসা, সাগুদানা ভুনা ও পাঁচ তরকারি। মেলে শ্যামা দানার পায়েস। পেঁয়াজ-রসুনের ব্যবহার একেবারেই নেই, রান্না হয় আদা, কাঁচা লঙ্কা ও অন্যান্য মশলা দিয়ে। হয় না মাছ, মাংস, ডিমের কোনো পদ।
জগন্নাথ ভোজনালয়ে খদ্দেরের সংখ্যা বাড়ছে। ধর্মীয় দিকে নয়, শারীরিক সুস্থতার জন্য মানুষ নিরামিষ খাবার পছন্দ করছেন। স্বাস্থ্য সচেতন তরুণরা নিয়মিত খেতে আসেন বলেও জানান কর্মচারীরা। করোনাকালীন লক ডাউনের সময়ে যেখানে বহু পুরনো দোকান বন্ধ হয়ে মুখ থুবড়ে পড়েছিল, জগন্নাথ ভোজনালয় বন্ধ হয়নি। প্রতিদিন খোলা থাকত এক বেলার জন্য।
Discussion about this post