১৭১০ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে জগদ্ধাত্রী পুজো প্রচলন করেন মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র রায়। এই পুজো বাঙালির ঐতিহ্য বহন করে ঠিক দুর্গা পুজোর মতই। গোটা বাংলা জুড়ে অনেক জায়গায় হয় হৈমন্তিকার আরাধনা। তার মধ্যে অন্যতম চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো। পুজোর পাশাপাশি এখানে আলোকসজ্জাও বেশ জনপ্রিয়। তবে বেশ কিছু বনেদি বাড়ির পুজোর ইতিহাস আজও আমাদের অজানা। সেই অজানা কিছু পুজোর মধ্যে কালিকাপুরবাসী নিতাইচাঁদের জগদ্ধাত্রী পুজোও একটি।
১৩৩০ বঙ্গাব্দের কার্তিক মাসে শুক্লা নবমী তিথিতে কালিকাপুরবাসি নিতাইচাঁদের জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু হয়। ১০০ বছর পুরনো এই পুজোর একটি বিশেষ ইতিহাস আছে। ১৩৩০ বঙ্গাব্দের আশ্বিন মাসের এক ব্রহ্মলগ্নে নিতাইচাঁদ মুখার্জি স্বপ্নাদেশে দেখেন এক অতি সাধারণ মহিলার বেশে যার কোলে একটি মেয়ে রয়েছে। সেই মেয়েটি তার বাড়ির উঠোনে বসে খাবার খাচ্ছেন। তিনি বলছেন আগামী ১৫ কার্তিক শুক্লা নবমী তিথিতে তিনি তার পুজো চান যেখানে মা জগদ্ধাত্রী নিজে উপস্থিত থাকবেন। নিতাইচাঁদ নিজের বাড়িতেই লোক ডেকে মায়ের প্রতিমা তৈরির বন্দোবস্ত করেন এবং ধূম ধাম করে পুজো শুরু করেন।
পুজোর সময় নিতাই চাঁদ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকেন মায়ের জন্য কখন তিনি আসবেন। হঠাৎই তার রোমাঞ্চ অনুভব হল, তিনি শুনতে পেলেন একজন মহিলা তার কাছে খাবার চাইছে। তিনি মুখ ফিরিয়ে দেখেন যে এক ঘোমটা টানা মহিলা কোলে মেয়েকে নিয়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি তৎক্ষণাৎ তাকে খাবারের জায়গায় নিয়ে গেলেন। পরম তৃপ্তি সহকারে মহিলা খাবার গ্রহণ করলেন। এমন সময় তিনি খেয়াল করলেন ঘোমটার আড়ালে মহিলার মুখটি অবিকল তার স্বপ্নে দেখা মহিলার মতন। তার আর বুঝতে দেরি হল না যে মা জগদ্ধাত্রী নিজে উপস্থিত হয়েছেন তাঁর পুজোয়। বাড়ির অন্যান্য সদস্যদের খবর দিতে তিনি স্থান ত্যাগ করেন। সবাই যখন পৌঁছন তখন তারা আর কেউ সেই মহিলাকে দেখতে পান না। পংক্তিতে সবাই খাচ্ছে কিন্তু তাঁর জায়গাটি ফাঁকা ছিল।
আজও বাড়ির চতুর্থ পুরুষ গোবিন্দ মুখার্জী এই পুজোর তত্ত্বাবধান করেন। এখনও বাড়ির পুজোর ঐতিহ্য বহন করে চলেছেন তিনি। আজও এলাকার প্রতিটি মানুষের পাত পড়ে এই বনেদি বাড়ির উঠোনে। তাছাড়া কাঙালি ভোজনের ব্যাবস্থাও থাকে। ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী তিথির পুজো মূলতঃ আজও একইদিনে হয় এবং দশমী পুজো পরের দিন সম্পন্ন হয়। বাড়িতে আখ, কলা ও চাল কুমড়ো বলির প্রচলন আছে ও কুমারী পুজোও হয়। সাধারণতঃ পুজোর ভোগের খিচুড়ি নিরামিষ হয় কিন্তু এই বাড়িতে পুজোর ভোগের খিচুড়িতে চিংড়ি মাছ ব্যাবহার করা হয়। এরও একটা ইতিহাস আছে নিতাইচাঁদের পুজোতে মা জগদ্ধাত্রী নিজের খাবারের যে উচ্ছিষ্ট রেখেছিলেন তাতে চিংড়ি মাছ পাওয়া গিয়েছিল, যা আর কারোর পাতেই ছিল না। আপনারা চাইলেই ঘুরে আসতে পারেন এই বনেদি বাড়ির পুজো দর্শন করে। কীভাবে যাবেন? ক্যানিং লাইনের কালিকাপুর স্টেশনে নেমে সাউথ গড়িয়ার চড়কডাঙ্গার মাঠের পাশেই এই মুখার্জী বাড়ি।
Discussion about this post