যাদবপুর কফি হাউসে বেশ কিছু সমস্যার কারণে বিগত কয়েক সপ্তাহ যাবৎ চলছে একটি টালমাটাল পরিবেশ। ডেইলি নিউজ রিল পূর্বের সেই সমস্যা সংক্রান্ত খবরও মানুষের সামনে রেখেছে। ‘ল্যাপটপ ব্যবহার করা যাবেনা’ বলে কফি হাউস কর্তৃপক্ষ যে নোটিশ দিয়েছিল, তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদীরা কর্তৃপক্ষকে ৭৫ জনের সইসহ একটি চিঠিও লিখেছিলেন। কিছুদিন অবস্থা শান্ত থাকার পর সম্প্রতি সেই সমস্যা আবারও মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো। ‘অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য’ বন্ধ হয়ে গেল যাদবপুর কফি হাউস। কারণ হিসেবে নোটিশ বলছে ‘গ্রাহকদের অভব্য আচরণ এবং হিংস্রতা প্রদর্শন’। কিন্তু গ্রাহকদের অভিযোগ অন্য।
শুক্রবার দুপুরে শিক্ষিকা এবং গবেষক দেবলীনা ঘোষ কফি হাউসে ল্যাপটপ নিয়ে কাজে বসেছিলেন। পূর্বের ল্যাপটপে নিষেধাজ্ঞার নোটিশের দোহাই দিয়ে, প্রায় ফাঁকা কফি হাউসে দেবলীনাকে ম্যানেজার সহ কর্মীরা ঘিরে ধরে চিৎকার করতে থাকেন। সেইসময় তাঁকে রীতিমত মানসিকভাবে হেনস্থা করা হয় বলেও তিনি দাবি করেছেন। তাঁর কথায়, “ম্যানেজার বারবার বলছিলেন, ‘কফি হাউস বন্ধ করো, এই সব কাস্টমার বেরোও, বেরোও’। অতজন ঘিরে ধরার পরেও কেউ আমাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন নি।’’ সেই সময়েই দেবলীনা ‘হিট অব দ্য মোমেন্ট’ নোটিশটি ছিঁড়ে ফেলেন।
এরপরে সন্ধ্যেবেলা কফি ওয়ার্কার্স কোওপারেটিভ সোসাইটির তরফ থেকে প্রতিনিধিরা যাদবপুর কফি হাউসে এসে আবারও নোটিশ ছেঁড়া নিয়ে দেবলীনার উপর চড়াও হন। তখন অন্য প্রতিবাদীরা রুখে দাঁড়ান। তাঁদের সঙ্গে কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিদের বচসা শুরু হয়। সেই বচসার পরেই কর্তৃপক্ষ হঠাৎ সিদ্ধান্ত নেয়, যে কফি হাউস বন্ধ করা হবে। কফি হাউস বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দুই পক্ষ যাদবপুর থানায় যায়। নোটিশ ছেঁড়ার জন্য দেবলীনার নামে কর্তৃপক্ষ এফআইআর দায়ের করতে চাইলে পুলিশ জানিয়ে দেয় যে নোটিশটি সম্পূর্ণ বেআইনি। সুতরাং সেই অভিযোগটিরও কোনো গুরুত্ব নেই। পুলিশ দুই পক্ষকেই ঠান্ডা মাথায় নিজেদের মধ্যে ‘ঝামেলা মিটিয়ে নেওয়ার’ পরামর্শ দিয়েছে।
তবে, প্রতিবাদীদের সিংহভাগ মনে করছেন যে, হঠাৎ করে এই ঐতিহ্যমন্ডিত কফি হাউস বন্ধ করা, বা এই সামান্য বিষয়ে এতবড় ঘটনা ঘটার পিছনে রয়েছে অন্য কোনো বড় পরিকল্পনা। তাঁরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন যে, বৌদ্ধিক চর্চা, আলাপ-আলোচনা, ভাব বিনিময়ের ক্ষেত্র যাদবপুর কফি হাউস, আসলে বদলে যেতে চলেছে কোনো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রেস্তোরাঁ বা শপিং মলে। কফি হাউসের এই আচমকা হাউস বন্ধ করার পদক্ষেপ এবং দেবলীনা ঘোষের মত বহু বছরের গ্রাহকদের উপর অভব্য আচরণের জন্য কড়া নিন্দা করছেন প্রতিবাদীরা। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলতে চাইলেও তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
Discussion about this post