তথাকথিত কর্পোরেট মিডিয়া ও হোয়াটস অ্যাপ ইউনিভার্সিটি জুড়ে ইজরায়েলের স্তুতি পাঠ কোনো নতুন খবর নয়। সেই আদর্শ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের বিজ্ঞাপন আজ ব্যানারসহ মুখ থুবড়ে পড়েছে রাস্তায়। নীল সাদা রঙা জাতীয় পতাকা হাতে পথে নেমে আন্দোলনে যোগ দিয়েছে অগুনতি মানুষ। সমস্ত বিচার বিভাগীয় ক্ষমতা সরকারের অধীনে আনার উদ্দেশ্যে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু নতুন বিচার আইন প্রণয়ন করতে উদ্যত হয়েছিলেন কয়েক মাস আগে। তারপর থেকেই সেই আইনের বিরোধিতা করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শুরু হয়েছে অধিকার রক্ষার লড়াই। প্রতিবাদের ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে জেরুজালেম থেকে তেল আভিভ পর্যন্ত।
নতুন আইন কার্যকরী হলে বিপন্ন হবে মানুষের অধিকার, বিচার ব্যবস্থা হারাবে তার স্বচ্ছতা। সুপ্রিম কোর্টের থেকে বিচার ক্ষমতা সরে গিয়ে আসল ক্ষমতা চলে আসবে সরকারী মন্ত্রী, আইন প্রণেতাদের হাতে। সুপ্রিম কোর্টের রায় খারিজ করা থেকে বিচারক নির্বাচনের মতো গুরুতর সিদ্ধান্ত গ্রহণেও ভূমিকা থাকবে পার্লামেন্টের। নিজেদের অধিকার রক্ষা ও গণতন্ত্রকে বাঁচাতে রাষ্ট্রের এই আগ্রাসনের প্রতিবাদে একজোট হয়ে পথে নেমেছে দেশবাসী। বিক্ষোভকারীদের কথায়, “এটি গণতন্ত্র নয়, বরং পদ্ধতিগত গণতন্ত্র। এই গণতন্ত্র ফাঁপা ও অন্তঃসারশূন্য।”
২০ জনেরও বেশি মেয়র এই ঘটনার প্রতিবাদে অনশন বিক্ষোভে বসেছেন। দেশের সর্ববৃহৎ কর্মী সংগঠন হিস্টাড্রুটের ডাকা বনধে একপ্রকার স্তব্ধ ইজরায়েল। তেল আভিভে বিমান কর্মীদের প্রতিবাদে বন্ধ হয়ে গিয়েছে বিমান পরিষেবা। শপিং মল সহ স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়, রেস্তোরায় ঝুলছে তালা। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োয়াভ গ্যালান্ত এই আইনের সমালোচনা করায় চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে তাঁকে মন্ত্রিত্ব কাড়া হয়েছে। বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু প্রচ্ছন্নভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন, তার শাসনে সরকারী নিয়মের প্রত্যাখানের স্রেফ কোনো জায়গা নেই। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতি আইজ্যাক হারযগের প্রকাশ্যে প্রধানমন্ত্রীর নতুন আইনের বিরোধিতা করার ঘটনা সংক্ষিপ্ত হলেও তাৎপর্যপূর্ণ। এই অবস্থায় নেতানিয়াহু সাময়িকভাবে নিয়েছেন এই আইন প্রণয়ন থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত। জানা গিয়েছে, তাঁর অতি দক্ষিণপন্থী শাসক জোটের তরফ থেকে ক্রমাগত আসছে প্রস্তাবিত আইন কার্যকর করার চাপ।
চিত্র ঋণ – অরি ফগেল
Discussion about this post