শপিং মল, গয়নার দোকান, কসমেটিকস থেকে শুরু করে ই-কমার্স ওয়েবসাইট। সর্বত্রই চলে এদিনের স্পেশাল ডিসকাউন্ট। স্কুলে বা অফিসে মেয়েদের একদিনের বিশেষ যত্ন, উপহার এমন কতো কিছুর মধ্যে দিয়েই উদযাপিত হয় ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’। যার পূর্বনাম ছিল ‘আন্তর্জাতিক শ্রমজীবী নারী দিবস’। এই ‘শ্রমজীবী’ কথাটিতে রয়েছে এক দীর্ঘ লড়াইয়ের গল্প। আজকের এই পুঁজিসর্বস্ব জাঁকজমকের উৎসবের আড়ালে ঢাকা পড়ে যাওয়া নারীদিবসের আসল দাবী কী ছিল? এর শুরুর ইতিহাসই বা কী? চলুন, সেই গল্পই জেনে নিই আজ।
১৯০৮ সালে আমেরিকার মহিলা শ্রমিকদের আন্দোলনের হাত ধরেই ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’-এর সূচনা হয়। আমেরিকার সুতোকলের প্রায় পনেরো হাজার মহিলা শ্রমিক কর্ম বিরতি, সমান বেতন, ভোটাধিকারের দাবীতে; শোষনের বিরুদ্ধে নিউ ইয়র্কের রাস্তায় নামে। এর এক বছর পরে ১৯০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আমেরিকার সোস্যালিস্ট পার্টি প্রথম নারী সম্মেলনের আয়োজন করে , নেতৃত্ব দেন ডেনমার্কের মহিলা ক্লারা জেটকিন। ১৯১০ সালে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে আয়োজিত হয় দ্বিতীয় নারী সম্মেলন। সেখানে উপস্থিত ছিলো ১৭ টি দেশ এবং ১০০ নারী প্রতিনিধি। তখন ক্লারা জেটকিন নারী দিবসকে ‘আন্তর্জাতিক’ স্বীকৃতি দেওয়ার দাবী জানান এবং ইউরোপের দেশগুলো তাতে সাড়াও দেয়।
বিশ্বযুদ্ধের প্রতিবাদে ১৯১৪-র ২৮ ফেব্রুয়ারি ‘রুটি ও শান্তি’-র দাবীতে রাশিয়ার মহিলা শ্রমিকরা প্রতিবাদে সরব হয়। ৮ ই মার্চ সেই প্রতিবাদে সামিল হয় ইউরোপীয় মহিলারাও। তারপর কতো জল গড়িয়েছে, আর কতো শোষণ বেড়েছে তার হিসেব নেই। এরপর ১৯৭৫ সালে ৮ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ বলে পাকাপাকিভাবে ঘোষনা করে জাতিসংঘ। তারপর থেকে প্রত্যেক বছরই সমস্ত দেশে ৮ মার্চ ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়। দিনটি স্বীকৃতি পেলেও সাম্যের দাবীগুলো কতটা স্বীকৃতি পেয়েছে তার নিয়ে আজও যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
‘এখন মেয়েরা সবই করছে’ বলে যতোই একটা মেকি সাম্যকে আমাদের সামনে তুলে দেওয়া হোক। বাস্তব যে আসলে অন্য কথা বলে তা আমরা সবাই জানি। মেয়েদের সামাজিক, রাজনৈতিক অবস্থান দেখলে এই বৈষম্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে। মেয়েরা বাইরের কাজ করলেও আজও আমাদের সমাজে গার্হস্থ্য শ্রমের বেশিরভাগটাই মেয়েদের দিতে হয়। কর্মক্ষেত্রে মেয়েদের যৌন হয়রানির নজির একেবারেই কম নয়। এমনকি কোভিড পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে বেশি কাজ হারিয়েছেন মহিলারাই। আমেরিকার মহিলা শ্রমিকদের দাবী করা সেই সাম্য এখনও অনেক দূর। উৎসব, উদযাপন হোক কিন্তু লড়াইয়ের ভাষা হারিয়ে নয়।
Discussion about this post