আজ এই বিংশ শতকে দাঁড়িয়েও মাথায় শুধু একটি ভাবনাই উঁকি দিয়ে যাচ্ছে। চারিদিকে ওঠা নারী-পুরুষের সমান অধিকারের লড়াই ঠিক কতটা সঠিক দিশা পাচ্ছে? কেন এই আধুনিক সমাজে দাঁড়িয়েও নারীদের প্রতি দিনের পর দিন ধরে হয়ে চলেছে অন্যায়? কেন আজও খবরে বড় হয়ে উঠে শবরীমালার প্রসঙ্গ? কেনই বা আকছার কাগজের পাতায় চোখে পড়ে ধর্ষণের মত ঘৃণ্য অপরাধের ঘটনা? নাহ! এ প্রশ্নগুলোর উত্তর আমার অন্ততঃ জানা নেই। তবে শুধু এগুলোই নয়। এই বিংশ শতকে দাঁড়িয়েও নারীদের প্রতি হয়ে আসা এমন কিছু বর্বরোচিত প্রথার কথা উঠে আসছে, যা শুনলে আপনিও শিউরে উঠবেন বৈকি! এমনকি পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে দিনের পর দিন মহা সমারোহে পালিত হয়ে আসছে এমনই কিছু ঘৃণ্য প্রথা। তার একটির কথাই আজ বলি।
ফিমেল জেনিটাল মিউটিলেশনের নাম শুনেছেন কখনও? এই পদ্ধতিতে, বিয়ের আগে যাতে কোনও মেয়ে যৌন সঙ্গম না করতে পারে, সেই কারণে তার যৌনাঙ্গ আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে অপসারণ করা হয়। মোট তিন রকম পদ্ধতির সাহায্যে এটি করা হয়ে থাকে। ১) ক্লিটেরিওডেক্টমি (যৌনাঙ্গের ক্লিটোরিসের আংশিক কিংবা সম্পূর্ণ অপসারণ), ২) এক্সিশন (যৌনাঙ্গের ভেতরের অবয়ব বিচ্ছেদ) এবং ৩) ইনফিবিউলেশন। এগুলির মধ্যে সবথেকে প্রচলিত তৃতীয় পদ্ধতিটি। ঠিক কীভাবে করা হয় এই ‘ইনফিবিউলেশন’? জানলে আঁতকে উঠতেই হয়! এই পদ্ধতির মাধ্যমে শুধু মাত্র প্রস্রাব করার অংশটুকু ছেড়ে মেয়েদের যৌনাঙ্গ সেলাই করে দেওয়া হয়। মূত্র এবং রজঃস্বলা হলে সেই রক্ত বের হওয়ার জন্য মাত্র ছোট্ট একটি সরু ছিদ্র রেখে পুরো যোনিমুখ সেলাই করে জুড়ে দেওয়া হয়। সেলাই করার পর প্রায় কুড়ি দিন হাত-পা বেঁধে রাখা হয় মেয়েটিকে। যাতে সেলাইটি সম্পূর্ণ ভাবে শুকিয়ে যায় এবং মেয়েটি কাঁচা সেলাইয থাকাকালীন তাতে হাত না দেয়। সেলাই যাতে ছিঁড়ে না যায়, সেই কারণে নিষেধ থাকে চলা-ফেরার ব্যাপারেও। শুধু ওপরের চামড়াটি সেলাই করে যৌনাঙ্গটি ঢেকে দেওয়া হয়। তারপর সেই সেলাই খোলা হয় মেয়েটির বিয়ের পর ফুলশয্যার রাতে। নিজের যৌনাঙ্গ দিয়েই সেই যোনিপথ উন্মুক্ত করে মেয়েটির স্বামী। এর দ্বারা বিয়ের আগে মেয়েটি যে সম্পূর্ণ কুমারী বা ভার্জিন অবস্থায় ছিল, এটাই প্রমানিত করা হয়।
উত্তর-পূর্ব আফ্রিকার ইরিত্রিয়া, ইথিওপিয়া, সোমালিয়া, সুদান ছাড়াও উত্তর আমেরিকা ও নিউজিল্যান্ডের কিছু কিছু জায়গায় বহুকাল ধরেই এই প্রথা চলে আসছে। পরিসংখ্যান বলছে, এখনও ২৭ টি দেশের প্রায় ২০ কোটি মেয়ে এই ঘৃণ্য প্রথার শিকার। এই লকডাউনের মধ্যেই সোমালিয়ায় ব্যাপক হারে বেড়েছে এই ‘প্রথা’ পালনের রীতি। শুনলে আরও অবাক হবেন যে পুরুষ নয় বরং বয়স্ক মহিলারাই এই ‘সতীত্ব’ রক্ষার কাজটি করে আসছেন এতদিন ধরে। এমনকি বিয়ের রাতে স্বামী নিজের যৌনাঙ্গ দিয়ে সেলাইটি খুলে যোনীপথ উন্মুক্ত করতে অমসর্থ হলে, কোনও বয়স্ক মহিলাই ধারালো অস্ত্র দিয়ে সেই সেলাই কেটে দেন।
কী? এখনও চুপ করে বসে থাকবেন তো? শিক্ষিত নারী-পুরুষ সমান অধিকারে বিশ্বাসী সমাজ কি এখনও সোচ্চার হবে না? ঘৃণ্য প্রথাগুলোর বিরুদ্ধে কি আওয়াজ তুলবেন না? নাকি জাতি-ধর্মের রাজনীতির আড়ালে কোথাও চাপা পড়ে যাবে প্রতিবাদী আগুনের আঁচ? সমাজে একটু ভালভাবে বেঁচে থাকার অধিকার কি সত্যিই কোনওদিন পাবেন নারীরা? জানা নেই। তবে ঋত্বিক ঘটক তো কবেই বলে গিয়েছেন “ভাবো, ভাবো, ভাবা প্র্যাকটিস করো”। সত্যিই ভাবার সময় চলে এসেছে। কী বলেন?
Discussion about this post