ধরুন এক বিকেলে আপনার ইচ্ছে হল কফি খাওয়ার। শহরের এক কফি শপে ঢুঁও মারলেন। কিন্তু এক কাপ কফির দাম শুনেই চোখ কপালে উঠল আপনার। প্রায় ৩০০০ টাকা! কী? ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না তো কথাটা? কিন্তু আপনি ঠিকই শুনছেন। একটা দুটো নয়, তিনের পিছনে ঠিক তিনটে শূন্যই। হবে নাই বা কেন? বিশ্বের সবচেয়ে দামী কফি বলে কথা। আর যদি বলি এই কফি তৈরি হয় গন্ধগোকুল বা খটাশ জাতীয় প্রাণীর মল থেকে? উঁহু, একটুও মিথ্যে নয়! আগাগোড়া বাস্তব ঘটনা। সে কফিই এখন সানন্দে পান করছে বাঙালি। খোদ কলকাতার বুকেই। যার পোশাকি নাম ইন্দোনেশিয়ান কফি ‘কফি লুয়াক। বিশ্বের ইতিহাসে সবথেকে দামী কফি।
সাধারণতঃ কফি লুয়াক তৈরি হয় ইন্দোনেশিয়ান সিভেট নামক এক স্তন্যপায়ী প্রাণীর মল বা বিষ্ঠা থেকে। এই সিভেট আমাদের দেশে গন্ধগোকুল বা খটাশ নামে বেশি পরিচিত। এই গন্ধগোকুলদেরই মল থেকে পাওয়া কফির বীজ স্বাদে ও গন্ধে অতুলনীয়। ঠিক কীভাবে পাওয়া যায় এই কফি? গন্ধবকুল কফির ফল খেতে খুব পছন্দ করে। ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন কফি ক্ষেতে রাতের বেলা ফল খেতে ঘোরাফেরা করে এরা। ফল খাওয়ার পর বীজ বা কফির বিনগুলি হজম না হওয়ায় তা মলের মাধ্যমে বেরিয়ে যায়। তখন সেই বীজগুলি সংগ্রহ করে শুকিয়ে তা দিয়েই কফি বানানো হয়। অন্যান্য কফির তুলনায় সেই কফির গুণগত মান একটু বেশিই ভালো। স্বাদে ও গন্ধে তা লা জবাব! আসলে কফির ফলটি খাওয়ার পর হজম না হওয়া বিনগুলি সিভেটের পাকস্থলীতেই থেকে যায়। পাকস্থলীর বিভিন্ন উৎসেচকের সাহায্যে বি গুলির ওপর একটি আস্তরণ তৈরি হয়। পরে আবরণ ছাড়া বীজগুলিই বেরোয় মলের মাধ্যমে।
দেশ-বিদেশের বহু জায়গায় রপ্তানি হয় এই কফি। স্বাভাবিকভাবেই দামও সাধারণ কফির থেকে অনেকটাই বেশি। আজকাল কলকাতাতেও বিভিন্ন ছোট-বড় কফিশপে দেখা মিলছে এই কফির। ‘মলের মাধ্যমে তৈরি হয়েছে এই কফি’ এই ধারণাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েই হুহু করেই বিক্রি হচ্ছে। দাম সে যতই বেশি হোক না কেন! কফি-প্রেমীদের কাছে তা প্রায় কিছুই না বলা চলে! তাহলে আর দেরি কিসের! আপনিও যদি এমন কফি-প্রেমী হন শহরের কফিশপে গিয়ে খোঁজ করতেই পারেন এই কফির। মাত্র হাজার তিনেকের বিনিময়েই আপনার হাতে এসে যাবে ধোঁয়া ওঠা গরম গরম কফি লুয়াক!
Discussion about this post