একটি মাত্র কিডনি নিয়ে বিশ্বের শীর্ষ পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া। তারপর দেশের জন্য গৌরব বয়ে আনা। এমন মানুষের জীবনকাহিনি এক অনুপ্রেরণার গল্প হবে বৈকি! ২০০২ সালের এশিয়ান গেমসে সোনা। ২০০৩ সালের বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ জিতে ইতিহাস গড়া। এই পদক ছিল ভারতের জন্য প্রথম বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ পদক। ম্যাঞ্চেস্টার কমনওয়েলথ গেমসে প্রথম ভারতীয় মহিলা হিসেবে ব্রোঞ্জ। ২০০৫ সালের বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স ফাইনালসে সোনা। ব্যথা কমানোর ওষুধে অ্যালার্জি, একটি কিডনি নিয়েও, কোনরকম শারীরিক সীমাবদ্ধতাকে লক্ষ্যের পথে বাধা হতে না দেওয়া, এই সব মিলিয়েই অঞ্জু ববি জর্জ। কে তিনি? আসুন জেনে নিই।
কেরলের কোট্টায়াম জেলার চিরানচিরায় এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম অঞ্জুর। চার বছর বয়সে সাইকেলের প্রতি বন্ধুত্ব। স্কুল জীবনে লং জাম্প ও দৌড়ে বড় ক্লাসের ছাত্রীদের অনায়াসে হারাতেন অঞ্জু। সেই সময় থেকেই অ্যাথলেটিক্স হয়ে উঠেছিল তাঁর ধ্যান-জ্ঞান। কেরলের বিখ্যাত টমাস মাস্টারের কাছে প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন। পরবর্তীকালে কলেজ জীবনে টি.পি. আউসেফের প্রশিক্ষণে অঞ্জু ক্রমশ নিজেকে জাতীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত করেন।
১৯৯৮ সালের ব্যাংকক এশিয়াডে ভারতীয় দল থেকে বাদ পড়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন অঞ্জু। স্বামী রবার্ট ববি জর্জ বলেছিলেন, “জীবন এখানেই শেষ নয়, একদিন তুমি অলিম্পিকেও পদক জিতবে।” অলিম্পিকে পদক জিততে না পারলেও ২০০৪ সালের এথেন্স অলিম্পিকে অঞ্জু ব্যক্তিগত সেরা ৬.৮৩ মিটার লাফিয়ে পঞ্চম হন। ভারতীয় ক্রীড়াঙ্গনে মিলখা সিং, পিটি ঊষার মতো কিংবদন্তিদের তালিকায় অঞ্জুর নামও স্বর্ণাক্ষরে খচিত হয়ে থাকবে।
অঞ্জুর সাফল্যের পেছনে তার স্বামী ও কোচ রবার্ট ববি জর্জের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আজও যেখানে পুরুষের সাফল্যের জন্য নারীকে কম্প্রোমাইজ করতে হয় নিজের জীবন, সেখানে অঞ্জুর স্বামী করেছিলেন উল্টো কাজ। তিনি নিজে জাতীয় স্তরের ট্রিপল জাম্প চ্যাম্পিয়ন ছিলেন, কিন্তু তিনি নিজের কেরিয়ার ছেড়ে অঞ্জুর সাফল্যের জন্য নিবেদিত হন। এ এক অবাক করা কাণ্ডই বটে! ২০০২ সালে অর্জুন পুরস্কার, ২০০৩ সালে খেলরত্ন, এবং ২০০৪ সালে পদ্মশ্রীতে ভূষিত এই কিংবদন্তি ভারতীয় অ্যাথলিট ভারতীয় অ্যাথলিটদের এই স্বপ্ন দেখাতে পেরেছেন, যে ভারতীয় হিসেবে বিশ্বমঞ্চে সাফল্য অর্জন সম্ভব।
Discussion about this post